দামুড়হুদা কুড়ুলগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতিতে লোকসান অব্যাহত

 

মো. শাহাবুদ্দিন: দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি গ্রামের কুড়ুলগাছি আদর্শ সমবায় সমিতি বছরের পর বছর লাভের মুখ দেখছেনা। প্রতি বছরই লোকসান গুনতে গুনতে বাড়ছে ঋণের বোঝা।

দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাইসার বিলের ধারে অবস্থিত কুড়ুলগাছি গ্রাম। এই গ্রামে বসবাস করতেন জমিদার কৈলাশ কামিনী। এপার ওপার বাংলার জনপ্রিয় নায়ক উত্তম কুমার একসময়  সাপ মোচন ছবির সুটিং করে গেছেন এ গ্রামেই। সেই থেকে গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী। জালাল উদ্দিন নামের এ গ্রামেরই এক বাসিন্দা কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে কেমিস্টের চাকরি করতেন। গ্রামের কৃষকেরা কীভাবে অধিক ফসল ফলাতে পারে তার জন্য তিনি চিন্তা-ভাবনা করে গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা করেন। এজন্য ১৯৮২ সালে ৭৩ জন কৃষককে নিয়ে ফলায় যারা ক্ষুধার অন্ন আমরা আছি তাদের জন্য এ স্লোগানকে সামনে রেখে গড়ে তোলেন কুড়ুলগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি। যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৩৮ জন। সমিতি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১১টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আর এ সবই করা হয়েছে সমিতির লাভের টাকা থেকে। গ্রামে বিদ্যুত আসার আগে নলকূপগুলো তেলে চালানো হতো। পরবর্তীতে বিদ্যুত সুবিধা পাওয়ার পর প্রত্যেকটি নলকূপকে বিদ্যুতায়িত করা হয়। তাতে চাষিদের সেচ খরচ অনেকটাই কমে যায়। তবে সমিতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জালাল উদ্দিন যতোদিন এ সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ততোদিন তা লাভ হয়েছিলো। পরবর্তীতে এ সমিতি আর লাভের মুখ দেখতে পারেনি।

সমিতির নীতিমালা অনুযায়ী ৩ বছর পর পর সমিতির সদস্যদের ভোটে কমিটি নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা সমিতির ব্যাপক উন্নয়নের কথা বললেও দায়িত্বভার গ্রহণের পর সমিতিকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলে। বিগত কমিটি দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রায় ২৮ লাখ টাকা  ঋণের দায় চাপিয়ে যায় বর্তমান কমিটির ওপর। সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি হাফিজ উদ্দিন জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর  ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। এ কমিটি হিসাব নিরীক্ষা করে দেখে প্রায় ১২ লাখ টাকার হিসাবে গরমিল রয়েছে। বিষয়টি বিগত কমিটিকে অবগত করে তারা নোটিশও প্রদান করে। সমিতিকে টিকিয়ে রাখা ও লাভজনক করার জন্য বর্তমান কমিটি নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কম খরচে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নলকূপগুলো সার্ভিসিঙের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি।

এলাকাবাসী জানায় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এ সমিতিটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়াতে হবে। এজন্য অভ্যন্তরীণ সূক্ষ্ম দুর্নীতিগুলো বর্জন করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে সেদিন হয় তো বেশি দূরে নয় যেদিন লোকসান আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এ সমিতির অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।