দামুড়হুদায় রাখাল ও কৃষাণ প্রথা বিলুপ্তির পথে

তৌহিদ তুহিন: দামুড়হুদার গ্রামীণ জনপথ থেকে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে রাখাল ও কৃষাণ প্রথা। দিনদিন আবাদি জমি কমে যাওয়ায় গৃহস্থালির বাড়িতে থাকা এ বিলুপ্তি হতে চলেছে। কালের আবর্তনে এই গ্রামীণ ঐতিহ্য প্রথা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময়ে গ্রামঞ্চলে প্রায় বাড়িতেই রাখা হতো গরু চরানোর জন্য রাখাল আর মাঠে কৃষি কাজের জন্য রাখা হতো কৃষাণ। সাধারণত অল্প বয়সের ছেলেদের বলা হতো রাখাল আর ২৫ থেকে ৩০ বছরের বয়সের লোকেদের বলা হতো কৃষাণ। এসব রাখাল-কৃষাণ গৃহস্থের বাড়িতে রাতযাপন করতো। সকাল হলেই রাখালেরা গৃহস্থের বাড়ি ভরা গরু-ছাগল মাঠে চরাতে বের হতো। কৃষাণেরা ভোর রাতেই বের হতো লাঙল জোয়াল কাঁধে এবং চাষ করার গরু নিয়ে জমিতে চাষ করতে যেতো। বাড়ির গৃহস্থেরা ছিঁকে-বাকে করে তাদের জন্য মাঠে ভাত পানি নিয়ে যেতো। মাঠে বসেই

photo rakhal copy

এসব রাখাল ও কৃষাণেরা ভাত খেয়ে মনের আনন্দে কাজ করে যেতো। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে আসতো। সন্ধ্যার পর গরুর খাবার খেতে দেয়া ও রাতে গরু গোযালে তোলায় ব্যস্ত থাকতো। গ্রামে প্রতিজনের বাড়িতে ছিলো বৈঠকখানা এসব রাখাল-কৃষাণেরা ও ঘরে রাতযাপন করতো। গৃহস্থরা এসব রাখাল-কৃষাণ বদল করতো বাংলা কার্তিক মাসে। বছরে তারা এক সপ্তা ছুটি ভোগ করতো। বর্তমানে কৃষিজমি কমে যাওয়ায় এবং কৃষিজমি আবাদ করতে আধুনিক যন্ত্রাংশ বের হওয়ায় এখন আর কৃষকেরা রাখাল-কৃষাণ রাখছেন না। মাঠ অনাবাদি জমে না থাকায় গরু-ছাগল মাঠে চরানো জায়গা না থাকায় গৃহস্থরা গরু-ছাগল আর পালে না। ফলে রাখাল আর রাখতে হচ্ছে না। গরু-ছাগল ২/১টা করে পুষে রাখছে। বড় বড় গৃহস্থের পরিবর্তে হয়ে গেছে ছোট ছোট কৃষক তারা নিজেরাই জমি চাষ করছে ট্রাক্টর দিয়ে। ফলে এখন আর গ্রামের সেই চিরচেনা রাখাল-কৃষাণ প্রথা চলে গেছে। রাখাল-কৃষাণের নামে অনেক গান-কবিতা রচিতো হয়েছে। এখন আর রাখালের বাঁশির সুর, কৃষকের মুখের গান শোনা যায় না। এসব রাখাল-কৃষাণের গল্প ছাড়া আর কিছুই নেই।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *