দামুড়হুদায় মৃত মুক্তিযোদ্ধার নামে জীবিত ব্যক্তির ভাতা উত্তোলন

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় মৃত মুক্তিযোদ্ধার নামে জীবিত ব্যক্তি ভাতা উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনসহ সর্ব মহলে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহল।

জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলা সদরের মিলপাড়ার (বর্তমানে বাজারপাড়া) মৃত ফরমান মণ্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী দু বছর আগে মারা যান। তার মুক্তিবার্তা নং-০৪০৬০৩০২৪৫। মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী মৃত্যুবরণ করায় তার স্ত্রী আছিয়া খাতুন ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিমাসে দু হাজার টাকা হারে ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। ওই একই নাম ঠিকানা ও মুক্তিবার্তা নং ব্যবহার করে দর্শনার এক চতুর ব্যক্তি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৩০ হাজার টাকা (১৫ মাসের) ভাতা উত্তোলন করে নেন। ওই সময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির উদ্দিন বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর  শুরু হয় তদন্ত। বন্ধ রাখা হয় ওই ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার সম্মানিভাতা। ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ার হোসেনের প্রেরিত চিঠির বলে এবং সমাজসেবা অফিসের যোগসাজশে আবারও চালু হয় তার নামে সম্মানি ভাতা। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ওই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেন। বিষয়টি আবারো প্রশাসনের নজরে আসে।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির উদ্দিন জানান, দামুড়হুদা সদরের মিলপাড়ার মৃত ফরমান মণ্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলীর নাম ঠিকানা ও মুক্তিবার্তা নং ব্যবহার করে দর্শনার এক ব্যক্তি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৩০ হাজার টাকা (১৫ মাসের) ভাতা উত্তোলন করে নেন। আমি ওই সময় বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করি। জীবিত জামাত আলী সেজে যে ব্যক্তি ভাতা নিচ্ছে আমার জানামতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। তার  প্রকৃত বাড়ি কোথায় তাও সঠিকভাবে জানি না। তার নাম ফরমান আলী। তিনি এক সময় কেরুর গাড়ি চালাতেন। এলাকায় তিনি ফরমান ড্রাইভার নামে পরিচিত। শুনেছি তার বাড়ি কুষ্টিয়া মিরপুর আমলা সদরে। তবে তিনি দর্শনা আজমপুরে তার বোনের বাড়িতে থাকেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের যোগসাজশেই তার নামে ভাতা উত্তোলন হচ্ছে বলে আমার ধারণা।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ছানোয়ার হোসেন জানান, আমার জানামতে তিনি দর্শনায় বাড়িঘর করেছেন এবং তিনি সেনাবাহিনীর একজন গাড়িচালক ছিলেন। গেজেট অনুয়ায়ী তার নামে ভাতা দেয়া হচ্ছে। ওই ব্যক্তি যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হবে তাহলে তিনি দামুড়হুদার মিলপাড়ার মৃত জামাত আলীর নাম ঠিকানা এবং মুক্তিবার্তা নম্বর ব্যবহার করবেন কেন? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেন। আমি থানা পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখেছি ওই নামে এলাকায় কেউ নেই এবং তাকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। বিধায় তার নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদনটি বাতিল করা হয়। ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে মৃত মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলীর পরিচয়ে ভাতা উত্তোলনকারী ফরমান ড্রাইভার জানান, তার বাড়ি কুষ্টিয়া মিরপুর আমলা সদরে। তিনি গত মে মাস থেকে ওখানেই বসবাস করছেন। ভাতা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন আমার নাম ঠিকানা দর্শনার স্থলে ভুল করে দামুড়হুদা হয়েছে। আপনার মুক্তিবার্তা নম্বর কতো জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি।

মৃত মুক্তিযোদ্ধার নামে জীবিত ব্যক্তির ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে উপজেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্ব মহলে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এমনটাই প্রত্যাশা।