দামুড়হুদার লোকনাথপুরে কুড়িকুষ্ঠি রোগের সাথে মানুষের বসবাস

সাহিত্যশাসিত দপ্তর, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এনজিও কেউ এগিয়ে আসেনি

 

তাছির আহমেদ/আব্দুস সালাম: মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারে না? ও বন্ধু ! সঙ্গীত শিল্পী-প্রয়াত ভূপেন হাজারিকার সাড়া জাগানো এ গানের গীতিকার, সকল স্তরের মানুষকে ভালবাসার সহানভুতিতে জাগ্রত করেছেন। সে কারণে এ গানের কথাগুলি আমাদের মনের মাঝে কখনো কখনো অজান্তেই বেজে ওঠে। দামুড়হুদার পল্লি লোকনাথপুরের রোহিত একটি জটিল রোগ বয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকার লোকজন এ রোগের নাম দিয়েছে কুড়োকুষ্টি, কেউ দিয়েছে টিউমার, কেউ আবার কুষ্ঠ। রোগের নাম যাই হোক না কেন এ নিয়ে রোহিত মিয়ার মাথাব্যথা নেই। অজানা রোগ নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পার করলেও তাকে সুস্থ করতে আজও কেউ এগিয়ে আসেনি। জঠিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত রোহিত মিয়ার আবার নতুন করে নানা উপসর্গ ভর করতে শুরু করেছে।

লোকনাথপুর গ্রামের মসজিদপাড়ার আনিছ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল রোহিত মিয়া জানান ১০/১২ বছর বয়সে বাম চোখের ভ্রু’র ওপর আঁচিলের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। তারপর আস্তে আস্তে সেটি বড় হতে থাকে। সে সময় পিতা-মাতা এ রোগ সারাতে তাবিজ কবজসহ অনেককিছু করছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। চোখের ওপর ওই আঁচিলটি বেড়ে ঝুলতে থাকলে বাম চোখে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এক সময় গ্রামের মানুষের পরামর্শে চুয়াডাঙ্গায় ডা. মালিকের সহযোগিতায় দু’বার অপারেশন করে চোখের মাংসপেশী ছেঁটে ফেলা হয়। দেখা দেয় নতুন উপসর্গ। বয়স বাড়ার সাথে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য ছোট বড় সাইজের মাংসের গুটি দানা। সে সাথে আবারও বাম চোখের ওপর নতুন করে দেখা দেয় পুরনো রোগ। বাম চোখের ওপর মাংসপেশী থুতনি পর্যন্ত ঝুলে পড়ায় বাম চোখটি অন্ধ হয়ে গেছে। রোদ গরমে গেলে সারাশরীর জ্বালাপোড়া করে।

এতো কিছুর পরও গ্রামের মানুষ আমাকে দিচ্ছে বেঁচে থাকার প্রেরণা। বিবাহিত জীবনে চার সন্তানের জনক আমি। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে কলেজ পড়ুয়া। অপরটি স্কুল পড়ুয়া। দুই ছেলে অনেক আগেই কাজে নেমেছে। নিজের জমি জমা নেই বললেই চলে। মরণব্যাধি এ কঠিন রোগ নিয়ে মাঠে-ঘাটে কাজ করতে খুব ভয় পাই। তাই লোকনাথপুর বাসস্ট্যান্ড যাত্রীছাউনীর পেছনে একটি পান-বিড়ির দোকান দিয়েছি। নীরবে অশ্রু ঢেলে করুণ আকুতিতে তিনি বলেন, আমি বাঁচতে চাই। এই রোগ থেকে আমি মুক্তি চাই। চোখের ওপর চেপে থাকা পরগাছার মতো মাংসপিণ্ডুটি কেউ ছেঁটে দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ালে হয়তো আবার আলোর মুখ দেখতে পাবো।

লোকনাথপুর গ্রামের ফুলপাড়ায় একই উপসর্গ নিয়ে একই পরিবারের মা ও দু’ছেলে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তরা হলো সন্নাসী দাসের স্ত্রী শেফালী এবং তার দু’ছেলে উজ্জ্বল ও  টিটন। অভাব অনটন ও চরম দারিদ্র্যতার কারণে তারাও পরিপূর্ণভাবে কখনো চিকিৎসা করাতে পারেনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা: সাঈদ-উর রহমান বলেন,  রোগের লক্ষণ শুনে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা যায় রোগটি নিউরোফাইব্রোমা। এটি জটিল ও কঠিন রোগ। তবে রোগটি পরীক্ষা নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত রোগটি নিউরোফাইব্রোমা কি-না তা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না।