দর্শনা হল্টস্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি : সন্ধ্যার পর সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ

 

রাজস্ব আয় হলেও দর্শনা হল্টস্টেশনের দিকে কর্তাদের নজর নেই

দর্শনা অফিস: ১৮৬২ সালে বর্তমানে দর্শনা আর্ন্তজাতিক স্টেশন প্রতিষ্ঠা হয়। সে সেময় ঢাকা-কোলকাতা যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল চালু ছিলো। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকার মানুষকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেলপথে যাতায়াতের জন্য ভারতের ভেতর দিয়ে বেনাপোল-যশোর হয়ে খুলনায় প্রবেশ করতে হতো। সে সময় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো রেলপথ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এ অঞ্চলের মানুষের সাথে খুলনার যোগাযোগ একেবারেই ভেঙে পড়ে। খুলনার সাথে যোগোযোগের লক্ষ্যেই ১৯৫২ সালে নির্মাণ করা হয় দর্শনা হল্ট স্টেশন। দর্শনা হল্ট স্টেশন প্রতিষ্ঠার পর এক সময়ের দর্শনা গোয়ালাচাঁদপুর পরিচিতি পেতে থাকে হল্টচাঁদপুরে। দর্শনা হল্টস্টেশনের বয়স এখন ৫০ পেরিয়ে গেছে। সরকার এ স্টেশন থেকে প্রতিবছর যে লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়ে থাকে তা অতিক্রম করে সরকারের খাতায় জমা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব। প্রতিষ্ঠালগ্নে স্টেশনে ২/১ ট্রেন চলাচল করতো। প্রতিষ্ঠাকালে টিনের ছাপড়ায় স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ১৯৬৯ সালের দিকে করা হয় পাকাকরণ। কালের আবর্তনে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। বেড়েছে জনসংখ্যা। সেই সাথে বেড়েছে ট্রেনযাত্রী। কিন্তু দর্শনা হল্টস্টেশন রয়ে গেছে সেকালের অবস্থায়। উন্নয়ন করা হয়নি কোনো অবকাঠামো। পাকাকরণকালে এ স্টেশনে ২শ যাত্রীর জন্য নির্মাণ করা হয় একটি সেড। বর্তমানে এ রুটে চলছে প্রচুর ট্রেন। এর মধ্যে এ স্টেশনে হল্ট করে থাকে ১৬টি ট্রেন। দুটি দূরপাল্লার ঢাকা-খুলনার ট্রেনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১০টি আন্তঃনগর ও ৬টি লোকাল ট্রেন চলাচল করছে। যে কারণে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত হাজার হাজার ট্রেনযাত্রীর সমাগম ঘটে এ স্টেশনে। অথচ আদিকালের স্টেশনের সমস্যার যেন অন্তঃ নেই। মাত্র ২শ ধারণ ক্ষমতা টিনসেডে হাজার হাজার অপেক্ষামাণ যাত্রীদের পোয়াতে হয় চরম দূর্ভোগ। রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে, বাতির ব্যবস্থা না থাকায় রাতে ঘুটঘুটে আঁধারে নিরাপত্তাহীনতায় ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে হয় যাত্রীদের। স্টেশনে ভিআইপি যাত্রীদের জন্য শৌচাগার থাকলেও এখানে ভিআইপি টিকিট বিক্রির অনুমোদন নেই। যে কারণে শৌচাগার তালাবদ্ধ থাকে। সাধারণ যাত্রীদের জন্য কোনো প্রকার শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। মহিলা যাত্রীরা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোতে গিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটালেও পুরুষ যাত্রীদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। স্টেশন এলাকায় কোনো আবাসিক হোটেল ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেনের অপেক্ষামাণ যাত্রীসাধারণকে রাতে স্টেশনে নিরাপত্তাহীনতায় দাঁড়িয়ে-বসে সময় কাটাতে হয়। স্টেশনে কোনো প্রকার বাউন্ডারি পাঁচিল, বিদ্যুত বাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে অবস্থার। প্রায় ঘটে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রধান সড়ক বয়ে গেলেও এখানে নেই ওভার ব্রিজ। হুইল গেটের ব্যবস্থা থাকলে বেশির ভাগ সময় থাকে অকেজো। এ কারণে প্রায় সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয় পথচলাচলকারীদের। খুলনা থেকে দর্শনায় প্রবেশের সময় কোনো প্রকার নাম ফলক না থাকায় যাত্রীদের স্থান চিনতে চরম দিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়। দর্শনা হল্টস্টেশনের কোনো স্থানেই নেই স্টেশনের নামের সাইন বোর্ড। স্টেশনে লোকবল সংকট, বিশুদ্ধ পানিসহ সমস্যার যেন অন্তঃ নেই। অথচ দর্শনা হল্টস্টেশন থেকে সরকার প্রতিবছর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব পাচ্ছে। সরকারের খাতায় প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব জমা পড়লেও উন্নয়নের দিকে যেন কোনো প্রকার খেয়াল নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

ট্রেনযাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সংশিষ্ট বিভাগের কর্তাদের। স্টেশনের অবকাঠামো প্রসারিত করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী দাবি করে বলেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম স্টেশন দর্শনা হল্ট। এ স্টেশনটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হওয়া উচিত। যাত্রী সেবারমান বৃদ্ধি করা হলেও হয়তো সরকার এখনকার তুলনায় আরো বেশি রাজস্ব পেতে পারে। তাই জনসাধারণের সুবিধা ও সরকারের রাজস্বের কথা ভেবে এখনো সকল সমস্যা দুরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে রেলওয়ে বিভাগের কর্তাদের।