তরকারির ঝোল নদীর পানি, লবণ ঝাল বলে কিছু থাকে না

মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিম্নমানের খাবার নিয়ে রোগীরা বললেন

মুজিবনগর প্রতিনিধি: সকালে নিম্নমানের একটি কলা আর ছোট্ট দুটি রুটি। চিনি কোনো দিন দেয়, কোনো দিন দেয় না। কোনো কোনো সময় মাছ মাংস দিলেও তা নাম মাত্র। ঝোল মনে হয় নদীর পানি। লবণ ঝাল বলে কিছুই থাকে না। বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকেই খাবার এনে খেতে হয়। মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীদের দেয়া খাবারের এমনই বর্ণনা দিলেন তারানগর গ্রামের মাথায় আঘাত পাওয়া রোগী লিয়ামত আলী (৪৫)। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ তুলে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই বেশিরভাগ রোগী খাবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। রোগীদের মাঝে কয়েকদিনের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটে। খাবারের অনিয়মের সাথে হাসপাতালের কয়েকজন জড়িত আছে বলে অভিযোগ তোলেন রোগীরা। নিম্নমানের খাবারের বিষয়টি কানে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসান আলীর। তাৎক্ষণিক তিনি ওয়ার্ডে গিয়ে পরিদর্শন করেন। সত্যতাও মেলে। তিনি জানিয়েছেন, আজ থেকে নিম্নমানের খাবার দেয়া হলে সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত মাসের ১০ তারিখ থেকে খাবার সরবরাহ করছেন মেহেরপুর শহরের ইকবাল স্টোরের সত্বাধিকারী খালেদ মুজিবুল ইসলাম। তবে অন্য এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে এ খাবার সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে। অনিয়মের বিষয়টি জানতে ঠিকাদারের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়মানুযায়ী রোগীপ্রতি সকালের খাবারে ১৮ টাকা মূল্যের একশ গ্রাম ওজনের পাউরুটি, ১৩ টাকা মূল্যের ১টি ডিম, ৪ টাকা মূল্যের ১টি পাকা কলা এবং ১ টাকা ৩০ পয়সা মূল্যের ২০ গ্রাম চিনি দেয়ার কথা রয়েছে। দুপুর ও রাতের খাবারে রুই, কাতলা অথবা মৃগেল মাছ ১শ ৮১ গ্রাম বরাদ্দ। কিন্তু প্রতিদিনই দেয়া হচ্ছে ছোট আকারের সিলভার কার্প মাছ। তাও আবার অল্প পরিমাণে। মাংসের ক্ষেত্রে খাসি ১১০ দশমিক ২৬ গ্রাম বরাদ্দ হলেও তা কোনোদিনই সঠিক পরিমাণে দেয়া হয়নি বলে জানালেন কয়েকজন রোগী। সব মিলিয়ে দিনে তিনবার খাবার বাবদ রোগীর মাথাপিছু বরাদ্দ ১২৫ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে কর্মরত একজন জানিয়েছেন ৬০-৭০ টাকার ওপরে কখনও খাবার দেয়া হচ্ছে না। মহাজনপুর গ্রামের মুকুল হোসেন (৪৫) তারানগর গ্রামের সোহাগ (৩০), বল্লভপুর গ্রামের জাহের আলী (৩০) এবং অবাক মণ্ডল (৬৫) মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকদিন ধরে ভর্তি। তারা খাবারের নিম্নমানের এ অনিয়মের কথা তুলে ধরে বলেন, গরিব মানুষ তাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে কিনে কিংবা বাড়ি থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে। খাবারের এ অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।