ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিএনপির জন্ম হলো হত্যা ও খুনের রাজনীতির মধ্যদিয়ে

 

ঝিনাইদহ অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হত্যা ও খুনের রাজনীতির মধ্যদিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছিলো। তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর দুঃশাসন ছাড়া মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে লালন-পালন করে। তাই দেশের মানুষের শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাইর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় ঝিনাইদহ সন্ত্রাসের জনপদ ছিলো। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস মুক্ত করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই রক্তাক্ত জনপদ ফিরে আসে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার, নির্যাতন, মানুষের অশান্তি। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে লুটপাট। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করেছেন। তাই দেশের সম্মান অক্ষুন্নু রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।

গত নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করায় ঝিনাইদহবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক সময় ঝিনাইদহ সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিলো। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা সেই সন্ত্রাস মুক্ত করেছি। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার, নির্যাতন, মানুষের অশান্তি। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে লুটপাট। আবার টাকা পাচার। তাদের সন্তানরা বিদেশে টাকা পাচার করে, আবার বিশ্বের কাছে সেটা ধরা পড়ে আমাদের দেশের মান-সম্মান ধূলায় লুটিয়ে দেয়। তারা ক্ষমতায় এলে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের নিশ্চয় ২০০৪ সালের কথা মনে আছে। ওইদিন গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ওনার কেবিনেটের মন্ত্রী এবং তার বড় ছেলে। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি কিন্তু হারিয়েছি আইভি রহমানকে। হারিয়েছি আরো ২২ নেতাকর্মীকে। সেই ক্ষত আজো আমাকে পোড়ায়।

জনসভায় বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অ্যাড. সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, সংসদ সদস্য বিএম মোজ্জাম্মেল হক, শেখ হেলাল, শফিকুল ইসলাম অপু, আব্দুল মান্নান, শফিকুল আজম খান চঞ্চল, নুরজাহান বেগম এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজু, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাচ আলী, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। জনসভাটি পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি ক্ষেত্রে আমরা গ্রাম থেকে গ্রামে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছি। আমরা গ্রামের সেবা করি, উন্নয়ন করি। আজকে কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। তিনি বলেন, এখন বিনা জামানতে বেকাররা ঋণ পায়। ৯০ লাখ বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। কর্মসংস্থানের জন্য বিনা জামানতে ১ লাখ টাকা ঋণও পায় বেকাররা। 

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসীদের লালন-পালন আর মানুষের ওপর অত্যাচার করে। তাদের কাছ থেকে কী আর আশা করা যায়। ইসলামের নামে বিএনপি-জামায়াত মানুষকে বিভ্রান্ত করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই তার সরকারের লক্ষ্য। হেফাজতকে উসকে দিয়ে বেগম জিয়া কোরআন শরীফের অবমাননা করেছেন। তারা শাপলা চত্বরে কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে ৫ মে। তিনি বলেন, কোনো মুসলমান এটা করতে পারে না। তিনি বলেন, তারা মসজিদে আগুন দিয়েছে। এদের ধর্ম-কর্ম কিছুই নেই। এমনকি বিএনপি ২১ আগস্ট আমাকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলো। খালেদা জিয়ার ক্যাবিনেটের মন্ত্রী আর ওনার ছেলে তারেক এর সাথে জড়িত ছিলো। তিনি বলেন, যারা মসজিদে আগুন দেয় তারা ইসলামের হেফাজত করতে পারে না। যারা কাবা শরীফের ছবি নকল করে তারা কীভাবে ইসলামের হেফাজত করবে। ইসলাম শন্তির ধর্ম। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা আপনাদের হাতে মোবাইলফোন তুলে দিয়েছিলাম। আজ সবার হাতেই মোবাইলফোন। প্রযুক্তি আজ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি আমরা। আওয়ামী লীগকে আপনারা ভোট দিয়েছেন। অমরা আপনাদের সেবা করেছি। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিএনপি জামায়ত ক্ষমতায় এলে আবারো দেশে জঙ্গীবাদ কায়েম হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, দেশের মানুষের আজ আর খাদ্যের জন্য হাহাকার নেই। আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে খাদ্য নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফল, তরকার, খাদ্যশস্য সবকিছুর উৎপাদন আমরা বৃদ্ধি করেছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করেছি।

এর আগে একই মাঠে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ১২টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ও ৪টি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ঝিনাইদহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ওরাল স্যালাইন ফ্যাক্টরি, শিশু একাডেমী কমপ্লেক্স, সরকারি কেসি কলেজের নবনির্মিত চারতলা ভবন, ঝিনাইদহ পৌরসভার সম্প্রসারিত ভবন ও পোস্ট অফিস ভবন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শৈলকূপা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কলেজ ও ঝিনাইদহ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সমাবেশে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ লোকজন সমাবেশস্থলে সমবেত হন। দুপুর সোয়া ২টায় চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গোল চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘প্রেরণা ৭১’ এরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ মাঠে অবতরণ করেন।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনাইদহে এসেছিলেন নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিতে। সেই নির্বাচনে এখানকার ৪টি আসনের সবকটিতেই জয় পান আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। প্রায় ৫ বছর পর যখন তিনি আবারো এলেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলায়  তখন সামনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন। তাই গত নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগের পাশে থাকতে এখানকার মানুষদের আহ্বান জানান তিনি।