জগন্নাথে ছাত্রীকে যৌন হয়রানিতে শিক্ষক চাকরিচ্যুত

 

স্টাফ রিনপোর্টার: একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেনকে (রাজীব মীর) চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, রাজীব মীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত বছরের ৫ এপ্রিল সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রী রাজীবের বিরুদ্ধে একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। অভিযোগের পক্ষে মোবাইল রেকর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণাদিও উপস্থাপন করেন। ওই ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোষাধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে একই বছরের ১১ এপ্রিল রাজীব মীরকে বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে ওই বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১তম সিন্ডিকেট সভায় রাজীবকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে ওই ছাত্রীর অভিযোগের পর সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আরও কয়েকজন ছাত্রী রাজীর মীরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল রাজীব মীরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাইসা আহমেদ লিসার নেতৃত্বে ওই কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জগন্নাথের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হোসনে আরা বেগম জলিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন। তদন্ত চলাকালে অভিযোগকারীরা মোবাইল রেকর্ড, ফেইসবুকে আলাপচারিতা ও মেসেজসহ বিভিন্ন প্রমাণাদি তুলে ধরেন। পাশাপাশি ছাত্রীদের সিনেমা হলে যেতে বাধ্য করা, বাসায় নিয়ে যাওয়া, একসাথে একাধিক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টাসহ নানা বিষয় উঠে আসে। এই কমিটির তদন্তেও রাজীব মীর দোষী সাব্যস্ত হন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের প্রতিবেদনে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে ‘জোর ব্যবস্থা’ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ সময় রাজীব মীরের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নেমেছিল দুটি ছাত্র সংগঠন। ওই দুই তদন্তে রাজীব মীরের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় গত নভেম্বরে। ওই কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বেলায়েত হোসেন তালুকদার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নূরে আলম আবদুল্লাহ। এই কমিটি নভেম্বরে রাজীব মীরকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করে উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনে। তাদের তদন্তেও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় রাজীবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালেও রাজীব মীরের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে তার অপসারণ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। রাজীবের আগের কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিলো। ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ সেখানকার শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা রাজীবকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন, যা সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলো।