চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে সরে ট্রেনে উঠে আবারও পড়ে বখাটেদের কুনজরে

 

লিপা এখন দর্শনায় : খুঁজছে নিরাপদ আশ্রয়

দর্শনা অফিস: লিজা ওরফে লিপা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে নিজেই গোপনে সরেছে। পরশু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সটকে পড়ে স্টেশনে গিয়ে ওঠে খুলনাগামী নকশিকাঁথায়। সেখানেও সে পড়ে কয়েক যুবকের কুনজরে। ভাগ্যিস ট্রেনের ওই বগিতে ছিলো মাথাভাঙ্গার এক পাঠক। তিনিই পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে লিজা ওরফে লিপাকে চিনে তাকে বখাটে যুবকদের কবল থেকে রক্ষা করেন। অবশ্য যশোর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি সে। তাকে নামতে হয়েছে দর্শনা হল্টস্টেশনে। শেষ পর্যন্ত ঠাঁই মিলেছে আজিমপুরের এক বাড়িতে। গতকাল লিপা সেখানেই ছিলো।

লিজা ওরফে লিপা বন্দিজীবন চায় না, সে চায় নিরাপদ আশ্রয়। তেমন আশ্রয় না পেলে কষ্টের সেই বাড়িতেই ফিরতে চায় সে। যে বাড়ি ছেড়ে অভিমানে গত ১০ জানুয়ারি হয়েছিলো নিরুদ্দেশ, উঠেছিলো ট্রেনে। গতকাল শুক্রবার লিজার নতুন ঠিকানা আজিমপুরের আশ্রয়ে বসে ষোড়শী লিপা ওরফে লিজা এ আকুতি জানিয়ে বলেছে, যখন শুনলাম, আমাকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বন্দি রাখা হবে তখনই হাসপাতাল থেকে সরে পড়ার পরিকল্পনা করি। সুযোগ বুঝে হাসপাতাল থেকে স্টেশনে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাই খুলনাগামী ট্রেন। ট্রেনে ওঠার পর কয়েকজন যুবক পিছু নেয়। কৌশলে কাছে নিতে চায়। ওরা বখাটে। বিষয়টি বুঝে যখন নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করতে থাকি, তখনই এক ভাই ও এক মহিলা আমাকে সহযোগিতা করেন। এদের সহযোগিতায় দর্শনা স্টেশনে নামি।

ট্রেনের মহিলার বাড়িতেই আশ্রয় হয়েছে লিপার। মহিলা চাকরিজীবী। তিনি পত্রিকার তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, লিপা তার অনেক কষ্টের কথা বলেছে। ও বাড়ি ফিরতেও যেমন চায় না, তেমনই কোনো বন্দিশালাও ওর পছন্দ নয়। আমার কাছেই থাকতে চাইছে। ওর কষ্টের কথা শুনে আমি আমার মেয়ে হিসেবেই কাছে রাখার কথা ভাবছি। অবশ্য যদি কোনো আইনগত জটিতলতার সৃষ্টি না হয়।

জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার বিকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা রকেট মেইল ট্রেন থেকে অজ্ঞান অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নামানো হয় ‌১৫ বছরের লিজাকে। চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টারের বিশেষ সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা আরামপাড়ার পরিছন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। সহযোগিতার হাত বাড়ান। আদর সোহাগে ভরিয়ে তোলেন। নিজের টাকা দিয়ে ওষুধ পথ্যও কিনে দেন। পরে লিজা ওরফে লিপার কথাবার্তায় অসঙ্গতি ফুটে উঠলে পরিছন মুখ ফিরিয়ে নেন। এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় লিপা ওরফে লিজার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে সমাজসেবা অফিসের প্রবেশনাল অফিসার তাকে আদালতের আদেশে ফরিদপুর টেপাখোলাস্থ নারী ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে নেয়ার প্রক্রিয়া করেন। গতকাল শুক্রবার তাকে ফরিদপুরে নেয়ার কথা ছিলো। এর আগেই গতপরশু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাঅল থেকে সরে পড়ে।

লিপা তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলে, সে খুলনা মানিকতলার ওজিউল্লার মেয়ে। থাকতো চাচাতো ভাই যশোর খেজুরার মানিরুলের বাড়ি। অপছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ে ঠিক করায় অভিমানে বাড়ি ছাড়ে। ট্রেনে উঠে কয়েক বখাটের পাল্লায় পড়ে। জ্ঞান হারায়। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ট্রেন থেকে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নামানো হয়।