চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সামানের নিউ মডার্ন জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরি

নৈশপ্রহরীসহ আটক ৫ : উদ্ধার হয়নি ২১ লাখ টাকার সোনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সামনের নিউ মডার্ন জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরি হয়েছে। ঈদের দিনে বা রাতে জুয়েলার্সের পাশের দেয়াল কেটে চোর ভেতরে ঢুকে দুটি সিন্দুক ভেঙে কমপক্ষে ২১ লাখ ৯ হাজার টাকার সোনা ও সোনার গয়না চুরি করেছে।

পুলিশ নৈশপ্রহরীসহ ৫ জনকে আটক করেছে। দুজন চুয়াডাঙ্গা নূরনগর কলোনীপাড়ার সামাদ ও জীবননগর বাসস্ট্যান্ডপাড়ার রফিকুলকে গতকাল শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। বাকি তিনজনের মধ্যে নৈশপ্রহরী সারজেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপর দুজন চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের বহুল আলোচিত জাফর মল্লিক ও দৌলাতদিয়াড় চূনুরীপাড়ার জমসের ওরফে ফিটিঙের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখানো প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বিপরীতেই নিউ মডার্ন জুয়েলার্স। এ জুয়েলার্সের মালিক গোলাম রসুল বাদী হয়ে গত পরশু বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় বলা হয়েছে, ঈদের রাতে কে বা কারা জুয়েলার্সের পাশের দেয়াল কেটে ভেতরে ঢুকে লোহার দুটি সিন্দুক ভেঙে সেখানে থাকা কমপক্ষে ৫০ ভরি ১০ আনা সোনা ও সোনার গয়না চুরি করেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২১ লাখ ৯ হাজার টাকা। অবশ্য স্থানীয় একাধিকসূত্র বলেছে, চুরির পর মালিক পক্ষ জানিয়েছিলো প্রায় কোটি টাকার সোনা ও গয়না চুরি হয়েছে।

DSC01449

চুরির নেপথ্য উন্মোচনে প্রথমেই নৈশপ্রহরী সাজ্জেদ হোসেনকে থানায় নেয়া হয়। তিনি মেহেরপুর দলিয়ারপুর গ্রামের বদর উদ্দীনের ছেলে। দৌলাতদিয়াড় চূনুরীপাড়ায় ভাড়ায় বসবাস করেন। টানা ৪ বছর ধরে তিনি নৈশপ্রহরীর কাজ করলেও তার এলাকায় তেমন কোনো চুরির ঘটনা অবশ্য জানা যায়নি। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তার নিকট থেকে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয় জীবননগর বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মৃত মসলেম উদ্দীনের ছেলে শরিফুল ইসলামকে। এ শরিফুল তিন বছর আগে ওই জুয়েলার্সে কাজ করতো। পরে তার ছোটভাই কাজ করতে থাকে। সম্প্রতি কাজ ছেড়েছে। নূরনগর কলোনীপাড়ার মৃত আকছেদ আলীর ছেলে সামাদকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। সে আন্তঃজেলা চোরচক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে জাফরপুরের চাঁন মল্লিকের ছেলে ফারুক মল্লিককে। তাকে থানায় নিয়ে জোরালো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গরু চুরি ও মাদক পাচারের সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয় এলাকাবাসীর কাছে অজানা না হলেও গতকাল তাকে ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলেছে, ফারুক ওই চোরচক্রের সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া দৌলাতদিয়াড় চূনুরীপাড়ার মৃত আচল শেখের ছেলে জামসের আলী ওরফে ফিটিংকেও থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ বলেছে, এ ফিটিঙের বিরুদ্ধে পূর্বেও সোনার দোকানে চুরিসহ তালা খোলা এবং ভাঙার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা বলেছে, যেভাবে চুরি হয়েছে তা অবিশ্বাস্য বটে। যে দেয়াল কাটা হয়েছে তা দেখে বুঝতে কারো বাকি নেই যে, বেশ কিছু সময় নিয়ে দেয়ালটা কাটা হয়েছে। তারপর ভেতরের দুটি সিন্দুক ভাঙা হয়েছে। যে দুটি সিন্দুকের একটি ছিলো প্রায় শূন্য, অপরটিতে ছিলো সোনা ও সোনার গয়না। অপর একটি সিন্দুক ভাঙার চেষ্টা করে চোর ব্যর্থ হয়েছে। থানার সামনের জুয়েলার্সে এভাবে চুরির ঘটনাকে বিরল বলে কেউ কেউ মন্তব্য করলেও কীভাবে তা সম্ভব হলো তা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। পুলিশ বলেছে, চোরচক্র ধরার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।