চুয়াডাঙ্গা শহরের রাস্তা যেন ঢাকাগামী কোচের কাছে হাইওয়ে : জনদুর্ভোগ

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরে পথচারীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকার কোচগুলো। ট্রাফিক আইন তো দূরের কথা। কোনো নিয়ম নীতিরই তোয়াক্কা না করে ঝড়ের বেগে চুয়াডাঙ্গা শহর ছেড়ে যাওয়া ও প্রবেশ অব্যাহত রেখেছে তারা। আর এ কারণে প্রায়শই ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা।

প্রতিদিন গড়ে চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা এবং ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা রুটে সব পরিবহনের বাস অন্তত ৫০ বার শহরের ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে। সব পরিবহনের কাউন্টার শহরের বড়বাজার রাস্তার পাশে অবস্থিত। প্রধান রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে যাত্রী নিয়ে অথবা ফেরার পথে কোচগুলো যে গতিতে চলাচল করে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ যেখানে চলাচলের গতি নির্ধারণ করে দিয়েছে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০-২৫ কি.মি. সেখানে ঢাকা রুটের বাস চুয়াডাঙ্গা শহরে চলাচল করে মহাসড়কে চলার গতিতে। পৌরসভার পক্ষ থেকে রোড ডিভাইডার স্থাপন করায় যান চলাচলে সুবিধা বেড়েছে অনেক। তবে ওই বিশাল সাইজের হিনো কোচ যখন যন্ত্রদানবের মতো ছুটে আসে তখন রিকশাচালক, মোটরসাইকেল আরোহী অথবা হেঁটে চলা মানুষগুলো তটস্থ হয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, হোক ভরদুপুর বা মধ্যরাত, টানা হর্ন বাজিয়ে সর্বোচ্চ গতিতে ঢাকা ফেরত অথবা ঢাকাগামী কোচগুলো শহর পার হয় অথবা প্রবেশ করে।

বর্ষা মরসুমে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানি ছিটিয়ে পথচারীদের কাপড়-চোপড় নষ্ট করে কিচ্ছু হয়নি ভাব দেখিয়ে দিব্বি দাপটের সাথে কোচগুলোর চলাচল দেখে শহরবাসীর মন্তব্য ‘ড্রাইভার সাহেবরা এ রাস্তাকেও মাওয়া-দৌলতদিয়া ঘাট মনে করেন, যেনো ফেরি ধরার প্রতিযোগিতা’।

গত এক সপ্তায় চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরে কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। যার নেপথ্য কারণ হিসেবে ওই ঢাকা কোচের বেপরোয়া গতি। গত পরশু নাটোর থেকে এক সাংবাদিক একদিনের জন্য বেড়াতে এসেছিলেন চুয়াডাঙ্গায়। একটি আবাসিক হোটেল থেকে (যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন) রাতের খাবার খেতে বড় বাজারের দিকে হেঁটে আসার পথে সারা শরীরে কাদা মেখে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হলো তাকে। জানা গেলো, একটি এয়ারকন্ডিশন বাসের চাকায় ছড়ানো কাদা-পানিতে এ দশা হয়েছে তার।ভাগ্য ভালো আর একসেট কাপড় সাথে এনেছিলেন ওই ভদ্রলোক। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। স্থানীয় দুই সংবাদকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালনে মোটরসাইকেল চেপে বের হয়েছিলেন। সঙ্গে ক্যামেরা, ল্যাপটপ। ফেরার পথে রেল গেটের কাছাকাছি হঠাত করে দুজনেই কাদা-পানিতে একাকার। সেইসাথে ক্যামেরা, ল্যাপটপের ব্যাগও যথারীতি….। অভিযোগ জানানো হলো সংশ্লিষ্ট বাস মালিকের কাছে, তিনি জানালেন বিষয়টি দেখছি। ব্যাস ওই পর্যন্তই। শুধু ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীদের দিয়ে এ দুরবস্থার উদাহরণ দেয়ার কারণ হচ্ছে পথচারীদের কাছে ঢাকা কোচের বেপরোয়া গতি আর সে কারণে ছোটখাট দুর্ঘটনা গা সওয়া হয়ে গেছে, সম্ভবত এ জন্যই কেউ অভিযোগ করার মতো ঝামেলায় জড়াতে চান না বা করেন না।

সচেতনমহল বলছে, একটি শহরের সৌন্দর্যের অনেকাংশই জুড়ে থাকে সেখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা, পরিবহন ব্যবস্থা। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও যে শহরে ব্যস্ততম বাজারের রাস্তা আটকে কোচে যাত্রী ওঠানামা করানো হয় তাতে বাইরের জেলা থেকে চুয়াডাঙ্গায় বেড়াতে আসা অতিথিদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতেই পারে। চুয়াডাঙ্গা শহরের যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথা রেখে সেটাও মেনে নেয়া যায়। তাই বলে ওই গাড়িগুলো যখন শহরের মধ্যে চলবে তখন তাদেরকে অবশ্যই ধীর গতিতে চলা আবশ্যক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।