চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে ঈদের চাল বিতরণে নানা অনিয়ম

 

জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের যাতাকলে চিড়ে চ্যাপ্টা ৫০১ দুস্থ পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের যাতাকলে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়েছে ৫০১ দুস্থ পরিবার। ঈদের আগে এসব দুস্থদের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফ’র চাল তিনসপ্তা পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাত করেই বিতরণের খবরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীরা বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ দামুড়হুদা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আশরাফ হোসেনের কর্তব্য অবহেলা ও নজরদারি না থাকায় বড় ধরনের এ অনিয়মের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।

দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের দুস্থদের জন্য সরকারের ঈদ শুভেচ্ছা হিসেবে পাঠানো ভিজিএফ’র চাল সকল ওয়ার্ডে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ সময় ৫নং ওয়ার্ডের দুস্থদের জন্য ৫০১ টি কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দ অনুযায়ী এ কার্ড মাসুদ আলীকে পরিষদ থেকে ঈদের আগেই দেয়া হয়। এরমধ্যে কিছু কার্ড চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বার নিয়ে নেন। এতে বেঁকে বসেন ইউপি সদস্য মাসুদ আলী। তিনি চেয়ারম্যানকে সরাসরি জানিয়ে দেন একটি কার্ড কম হলেও তিনি নেবেন না। চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বারের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিভিন্নভাবে মেম্বারকে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে অসুস্থতার অজুহাতে মেম্বার কার্ড বিতরণে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং চেয়ারম্যানের কাছে কার্ড ফেরত পাঠান।

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে দামুড়হুদা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে চাল বিতরণ শুরু হয়। এ সময় ওই ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মাসুদ আলী উপস্থিত না থাকলেও  চেয়ারম্যান, মহিলা মেম্বার ও গ্রামপুলিশ উপস্থিত ছিলেন। চাল নিতে আসা গোবিন্দহুদা ও চিতলা গ্রামের দুস্থজনেরা জানান, কার্ড প্রতি ১০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও সাত থেকে আট কেজি করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, তিনসপ্তা পর চাল দেয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরজ আলী মণ্ডলসহ স্থানীয় কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা এসব কার্ড বিতরণ করেছেন। ৫০১ টি কার্ডধারীর মধ্যে গতকাল দুপুর একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মাত্র ১শ থেকে দেড়শ কার্ডধারীর মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এতে বেশিরভাগ মানুষই বাদ পড়েছে।

ইউপি সদস্য মাসুদ আলী জানান, তিনি ঈদের আগে কার্ড পেয়েছিলেন এবং ওই সময়ই কার্ড ফেরত পাঠান। তবে অসুস্থতার কারণে কার্ড বিতরণ না করে চেয়ারম্যানের কাছে তিনি তা জমা দিয়েছেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরজ আলী জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে কার্ড ও চাল বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছেন। পরে দুস্থদের মাঝে ৪৫৫টি কার্ড বিতরণ করা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল আলম মিল্টন জানান, ৫নং ওয়ার্ডে ৫০১টি কার্ড বরাদ্দ ছিলো। যার মধ্যে ২৯টি তিনি নিজে রেখে এবং মহিলা মেম্বারকে ৫টি কার্ড দিয়ে বাকি কার্ড মাসুদ মেম্বারকে দেয়া হয়। মাসুদ মেম্বার কার্ড নেয়ার পর তা ফেরত দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। এই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার রাশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার চাল বিতরণের বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার পিআইও আশরাফ হোসেনের মোবাইল ফোনে রিং দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন জানান, মাসুদ মেম্বার যথাসময়ে তালিকা না দেয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি তিনি জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেট সুহেল মাহমুদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ঈদের আগেই চাল বিতরণের কথা। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।