চুয়াডাঙ্গা জীবননগর পিয়ারাতলার ভ্যানচালক শহিদুল হত্যার নেপথ্য উন্মোচন

৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বামীকে হত্যা করায় স্ত্রী শাহানাজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর পিয়ারাতলার ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম হত্যার কথা স্বীকার করেছে তার স্ত্রী শাহানাজ খাতুন ও তার সহযোগী বাকা মাঠপাড়ার রুহুল আমিন। ওমান প্রবাস ফেরত শাহানাজ খাতুন তার স্বামীকে শাসন করতে রুহুল আমিনসহ ৪ জনকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে। শাসনের নামে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে অণ্ডকোষ চেপে শহিদুলকে হত্যা করে। পুলিশ রুহুল আমিনের অপর ৩ সহযোগীকে ধরতে জাল ছড়িয়েছে।

শহিদুল ইসলামের লাশ বাড়ির পাশের ভুট্টাক্ষেত থেকে উদ্ধারের পরপরই পুলিশ শাহানাজ খাতুনসহ তার মেয়েকে গ্রেফতার করলেও তখন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ে জীবননগর থানার তৎকালীন ওসি ব্যর্থ চূড়ান্ত রিপোর্ট দেন। বাদীর নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনঃতদন্তে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পৃথক মামলায় শাহানাজকে গ্রেফতার দেখিয়ে দক্ষতার সাথে আদায় করেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত রুহল আমিনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

‌                জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জীবননগর পেয়ারাতলা তথা মনোহপুর মাঠপাড়ার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৫৫) ছিলেন ভ্যানচালক। তার স্ত্রী শাহানাজ খাতুন অর্থের জন্য ওমানে যান। দু বছরের প্রবাস জীবন শেষে বাড়ি ফেরেন। গত বছরের তথা ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়ির পাশের ভুট্টাক্ষেতে হত্যার শিকার হন শহিদুল ইসলাম। পরদিন লাশ উদ্ধার করা হয়। শহিদুলের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় শহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ ও মেয়ে শামীমা খাতুনকে। এদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। জীবননগর থানার তৎকালীন ওসি শাহাজাহান তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি তদন্ত করে হত্যার নেপথ্য উন্মোচনে ব্যর্থ হয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন। মামলার বাদী নারাজি আবেদন করলে আদালত পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্তভার পান চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন। তিনি তদন্তে ঘাতকচক্র শনাক্ত করেন। পৃথক একটি হত্যামামলায় শাহানাজ খাতুন ও বাকা মাঠপাড়ার মুনছুর আলী ব্যাপারির ছেলে রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। অবাক হলেও সত্য যে, যে আসামির মুখ থেকে তথ্য আদায় করতে না পেরে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, সেই আসামির মুখ থেকেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। শুধু শাহানাজই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি, ঘাতক রুহুল আমিনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সূত্র বলেছে, শাহানাজ খাতুন ও রুহুল আমিন অভিন্ন তথ্য দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় গত ১৫ অক্টোবর। এদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন আদালত। শাহানাজ তথ্য দিতে গিয়ে বলে, সে যখন ওমানে ছিলো তখন সেখান থেকে স্বামীর কাছে টাকা পাঠাতো। দেশে ফিরে সেই টাকার হিসেব চাইলে ঝগড়া বাধে। তা ছাড়া আমার কথা শুনতো না। সে কারণেই মামাবাড়ির সূত্র ধরে পরিচিত রুহুল আমিনের নিকট স্বামীকে শায়েস্তা করার জন্য বলি। রুহুল আমিন ৪০ হাজার টাকা চায়। ওই টাকা হাতে নিয়ে রুহুল আমিন তার সহযোগীদের নিয়ে রাস্তা থেকে ভূ্ট্টাক্ষেতে নিয়ে হত্যা করে।

শাহানাজ খাতুনের স্বীকারোক্তির সমর্থনেই রুহুল আমিন দোষ স্বীকার করেছে বলে পুলিশসূত্র জানিয়েছে।