চুয়াডাঙ্গা গহেরপুরের দিন মুজুরের মেয়ে শাপলা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েও দারিদ্রতা উচ্চশিক্ষা নিতে এখন বড় অন্তরায়

 

নজরুল ইসলাম: পৃথিবীতে মানুষের আর্বিভাবের আদি ইতিহাস অনুমানসাপেক্ষ। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ তার বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, কৌশল অবলম্বন করে স্বীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আসছে। মেধা এবং বুদ্ধির অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েই লক্ষ্যেস্থলে পৌঁছুছে। প্রতিভা প্রকৃতগত আবার কেউ মনে করেন এটি স্বাধনালব্ধ। প্রতিভার সাথে নিষ্ঠা, একগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রম নিযুক্ত করলেই তার যথার্থ বিকাশ ঘটে। মেধার চর্চা মানুষকে শ্রেষ্ঠতে পরিণত করে। প্রতিভাকে উজ্জ্বল করে বিকশিত করার জন্য তাই প্রয়োজন হয় সাধনার। সাধনা থাকলেও দারিদ্রতা আর অভাব প্রতিভা বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে অনেককেই প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। দারিদ্রতা একজন শিক্ষার্থীর প্রতিভা বিকাশের প্রধান অন্তরায়।

এতদা স্বত্তেও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার আমিরুল ইসলামের মেয়ে শাপলা খাতুন থেমে থাকেনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়ায় ভালো ফলাফল করলেও চায়ের দোকান চা বিক্রি করে পিতা আমিরুল মেয়েকে ভর্তি করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে। কলেজে শাপলা মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। পিতার দারিদ্রতা আর দিনমুজুর খেটে যোগান দেয়া অর্থের বিনিময়ে বই খাতা কেনা বিফলে যেতে দেয়নি সে। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে পাস করেছে সে। এখন উচ্চশিক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বাড়িতে বসে পড়াশুনায় ব্যস্থ সময় পার করছে। কিন্তু দু:শচিন্তা পিছু ছাড়ছে না। কিভবে চলবে তার লেখাপড়া। কোথা থেকে আসবে অর্থ। বর্তমানে বিক্রি করার মতো অবশিষ্ট ভিটে জমি ছাড়া কিছুই নেই। একদিকে পিতার স্বপ্ন মেয়ে বিচারক হবে অপরদিকে সে পর্যন্ত পৌঁছুতে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছুতে প্রয়োজন প্রচুর অর্থ। বারান্দায় বসে মেয়ের পড়ার শব্দ যখন কানে বাজে পিতার মন গুমরে গুমরে কাঁদে। ঠিকমতো আহারই জোটে না। কি করে জুটবে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ। না কি শাপলার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। আমিরুলের ৪ সন্তানসহ ৬ সদস্যের পরিবার। ছোট মেয়ে শাপলাকে নিয়ে যতো চিন্তা তার। পরিবারের বাকী সদস্যেদের কথা ভাবতে গেলে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় তাকে। দিন এনে দিন খাওয়া সংসার। সম্পদ বলতে ৫ শতক জমির ছোট একটি টিনের ঘর। এতোসব ভাবতেই পারছে না পিতা আমিরুল। পাহাড় সমান বাঁধাবিপত্তি অতিক্রম করে শাপলা কি পারবে তার লক্ষ্যস্থলে পৌঁছুতে। তাই শাপলার মেধা বিকাশ আর হতদরিদ্র পিতার স্বপ্ন পূরনে সমাজের বিত্তবানদের একটু সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।