চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে ৪৬২ জন মাদককারবারীর আত্মসমর্পণ : আত্মসর্মপণের ঢাল ব্যবহার করে হোতারা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কারবার

 

নজরুল ইসলাম: সমাজকে মাদকমুক্ত করতে জেলা পুলিশ মাদককারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মাদককাবারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে গ্রহণ করে নানা উদ্যোগ। পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জেলার মাদককারবারী অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে। ৪৬২ জন মাদককারবারী আত্মসর্মপণও করে। আত্মসর্মপণের ঢাল সামনে রেখে অনেক অসাধু ব্যক্তি পুরোদমে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া মাদককারবারীদের হোতারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ার আড়ালে প্রথম থেকেই রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

অসুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক এখন সামাজিক ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। কেননা মাদক সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মাদক আগ্রাসন যুবসমাজকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে সে প্রশ্ন এখন জনমনে। মাদকের কু-প্রভাব যেভাবে বিস্তৃত হয়ে পড়ছে তাতে আক্রান্ত পরিবার উদ্বিগ্ন। এর ভয়াল আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ সর্বনাশা নেশা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মাঝে। ইদানীং এ নেশা মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারেও বিস্তার লাভ করেছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে মাদকাসক্তরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

ফেনসিডিল, ইয়াবা, ভায়াগ্রার জীবনবিনাশী আগ্রাসনের শিকার হয়ে দেশের যুবসমাজ নৈতিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে আমাদের যুবসমাজ ক্রমাগতভাবে মাদকের ভয়াবহ ছোবলে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছে তরুণ সমাজ। তরুণরা আগামী দিনের কর্ণধার। যুবসমাজ মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে বেকার সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা এবং নানাবিধ সামাজিক সমস্যা এর প্রধান কারণ। আবার অনেক সময় অধিকাংশ বাবা-মা খবর রাখেন না যে, তার আদরের সন্তান ঘরের বাইরে কী করে ? এমনকি অনেক বাবা মা ঘরের ভেতরে সন্তান কী করে সে খবরও জানেন না। বাবা-মায়ের এই অসতর্কতার কারণেও অনেক সময় ছেলে মেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কমবেশি মাদক সমস্যা বিদ্যমান। বাংলাদেশেও মাদক ও মাদকাসক্তি এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মাদকসেবী কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতী। যে যুবসমাজের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি, অগ্রগতি ও ভবিষ্যত নির্ভরশীল তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যদি মাদকাসক্তিতে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে সে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের যুবসমাজের প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। তারুণ্যের শক্তি যেমন দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি এর উল্টোটি দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতির কারণও হতে পারে।

তরুণ সমাজের একটি অংশ নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের পাশাপাশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট ও মোবাইলফোনের আপলোডের মাধ্যমে ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অপপর্নোগ্রাফিতেও আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর কুফলে দিনকে দিন ইভটিজিং, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, গুম ও অপমৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। নেশার ছোবলে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। যুবসমাজকে সর্বনাশা নেশার ছোবল থেকে রক্ষায় সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন নিরলস পরিশ্রম করে মাদককারবারী স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জেলার ৪৬২ জন মাদককারবারী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসর্মপণ করে। জেলাবাসী আশার আলো দেখতে শুরু করে।

সূত্র বলেছে, চোটখাট মাদককারবারীরা আত্মসর্মপণ করলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজেদেরকে আড়াল করে হোতারা। কিছুদিন থেমে থাকার হোতারা আবারও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে মাদককারবার শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই প্রায় জেলার কোথাও না কোথাও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়ছে মাদকের চালন। এসব চালান ধরা পড়ার পর জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কী আত্মসর্মপণকারীরা লেবাস ঠিক রেখে কৌশল পাল্টে অতিগোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মাদকের কারবার। না-কি পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে রাঘববোয়ালরা ঘাপটি মেরে থেকে গোপনে করছে তাদের কারবার। তা না হলে মাদকের চালান কেনই বা আইনপ্রয়োগকারী সদস্যদের হাতে ধরা পড়ছে? আমরা দেশের যুবসমাজকে নেশার ছোবল থেকে সুরক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে ভুক্তোভোগী মহল মনে করছে।