চলে গেলেন ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার’ পথিকৃত মার্ভিন মিনস্কি

মাথাভাঙ্গা মনিটর: যন্ত্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের কাজ সহজ করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম পথিকৃত বিজ্ঞানী মার্ভিন মিনস্কি মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে ৮৮ বছর বয়সী এ বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয় বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘জ্ঞানের জন্য বিজ্ঞানীদের যে তৃষ্ণা’, তার সাথে ‘সত্যের জন্য দার্শনিকের অন্বেষার’ মেলবন্ধন ঘটেছিল মিনস্কির মধ্যে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে তার কাজ আজকের পার্সোনাল কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।মাইক্রোপ্রোসেসর ও সুপার কম্পিউটার উদ্ভাবনেরও বহু আগে অধ্যাপক মিনস্কিসহ গুটিকয় বিজ্ঞানীর ধারণা থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির নতুন এই শাখার গোড়াপত্তন হয়েছিলো। বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থির সাথে মিলে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস নেগ্রোপন্টে এক ইমেইলে ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ‘ফ্যাকাল্টি’ মিনস্কির মৃত্যুর খবর তার সহকর্মীদের জানান। সেখানে মিনস্কিকে তিনি অভিহিত করেন ‘ওয়ান অফ দি গ্রেটেস্ট মাইন্ডস ইন সায়েন্স’ হিসেবে।“তিনি হাস্যরস আর গভীর চিন্তার সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। পৃথিবীকে তিনি দেখতেন ভিন্ন চোখে। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কঠিনের সমাধান সহজেই পাওয়া যায় অনেক সময়, সহজগুলোই হয়ে ওঠে অনেক কঠিন। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে ডক্টরেট করা মিনস্কি ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথে কম্পিউটারের কাজ ও ভবিষ্যত নিয়ে দুই মাসের এক সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন।
এরপর তিনি লেখেন ‘পারসেপট্রনস’, ‘দ্য সোসাইটি অব মাইন্ড’ এবং ‘দ্য ইমোশন মেশিন’, যে বইগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যলেঞ্জ বুঝতে আজকের গবেষকদের জন্যও অবশ্য পাঠ্য। অবশ্য এর আগেই, ১৯৫১ সালে ডিন এডমন্ডসের সাথে মিলে মিনস্কি তৈরি করেন ‘স্টোকাস্টিক নিউরাল অ্যানালগ রিইনফোর্সমেন্ট কম্পিউটার’, যাকে বিশ্বের প্রথম ‘কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক’ বলা হয়ে থাকে। পরের দিনগুলোতে যান্ত্রিক বাহু ও হাত, কনফোকাল স্ক্যানিং মাইক্রোস্কোপ ও অন্যান্য রোবোটিক ‘যন্ত্র’ উদ্ভাবনের সাথে যুক্ত ছিলেন মিনস্কি। ই. ফ্রেডকিনের সাথে তার বানানো সিনথেসাইজার ‘মিউজ’ প্রযুক্তির অঙ্গনে নতুন চমক হয়ে আসে। মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান ড. হেনরি মিনস্কি ও ইহুদিবাদী সমাজকর্মী ফেনি রেইজারের সন্তান মার্ভিন লি মিনস্কি ১৯২৭ সালের ৯ আগস্ট নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে যোগ দিতে হয় নৌবাহিনীতে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর ভর্তি হন প্রিন্সটনে। সেখানেই তার দেখা হয় ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র আরেক দিকপাল জন ম্যাকার্থির সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে আলবার্ট আইনস্টাইন ও জন ফন নিউম্যানের সঙ্গেও মিনস্কির যোগাযোগ ঘটে।
স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও চার নাতি-নাতনী রেখে গেছেন অধ্যাপক মিনস্কি। আর রেখে গেছেন বহু ছাত্র-ছাত্রী, যারা যন্ত্রকে ‘বুদ্ধিমান’ বানানোর কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। বন্ধু ও সহকর্মী বিজ্ঞানী অ্যালান কের ভাষায়, মিনস্কি কখনো ভাবতে পারতো না যে তার কোনো কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।