গ্যাস সিলিন্ডার ভয়ঙ্কর

 

স্টাফ রিপোর্টার: সেহরির খাবার গরম করতে গিয়ে গত ১০ জুন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গৃহবধূ টুম্পা খাতুন এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হন। শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে এক সপ্তাহ তীব্র যন্ত্রণাভোগের পর ১৬ জুন তিনি মারা যান। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় ৪ মার্চ রাতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এক বছরের কন্যাশিশু ঐশী নিহত ও তার বাবা পোশাক শ্রমিক রাজু মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগে একই ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি মারা যান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ওয়াহিদ উল্লাহ।

মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা নিম্নমানের সিলিন্ডার (এলপিজি কিংবা সিএনজি) বিস্ফোরণে এমন দুর্ঘটনা ঢাকাসহ সারাদেশে এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসা-বাড়ি ও গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু থামছে না। অসচেতনভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার থাকা বাসা অথবা গাড়িগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে ‘মৃত্যুবোমা’। ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট এবং কয়েকটি জেলার স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মে ও জুন মাসে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৬০ জন দগ্ধ হয়েছেন।  গত এক বছরে এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিত্সা নিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২ জন। বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতিও ঘটে। সারাদেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনা সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট ও সামগ্রিক তথ্যভাণ্ডার নেই। তাই সিলিন্ডার বিস্ফোরণজনিত হতাহত ও সম্পদ ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিস্ফোরক অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে প্রায় ৯০ লাখ এলপিজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সিলিন্ডার রয়েছে। যানবাহনে ব্যবহূত সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) সিলিন্ডার আছে প্রায় চার লাখ। রি-টেস্টের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বাতিল হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার এলপিজি ও ২০০ থেকে ৩০০ সিএনজি সিলিন্ডার। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) এক ব্যবস্থাপক জানান, বাজারে নিম্নমানের ও পুরনো সিলিন্ডার ছড়িয়ে পড়েছে। এটি বিপজ্জনক। কিছুটা কম দামে পাওয়া যায় বলে অনেক গ্রাহক এমন নিম্নমানের সিলিন্ডারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আবার অনেক ক্রেতা নিরাপত্তা সিল না দেখেই নিম্নমানের সিলিন্ডার বেশি দামে কিনছেন। কিন্তু ব্যবহার শুরুর দু-এক বছর পর এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে।

 

সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা সম্পর্কে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. শামসুল আলম বলেন, নিয়ম মেনে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে প্রতিটি সিলিন্ডার ৪০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু দেশে সিলিন্ডারগুলো পরিবহন পর্যায়ে বিশেষ করে ডিলার পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এগুলোর স্বাভাবিক আয়ু কমে যায়। তিনি জানান, ১০ বছর পরপর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সিলিন্ডার রি-টেস্ট (পরীক্ষণ) করাতে হয়। রি-টেস্টে উত্তীর্ণ হলে প্রতিটি সিলিন্ডার পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহারের অনুমোদন পায় উত্পাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। শামসুল আলম জানান, গ্রাহক পর্যায়ে সিলিন্ডার নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি অধিদপ্তরের পক্ষে সম্ভব নয়। কোম্পানিগুলোর স্টোর পর্যন্ত এ মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডিলার কিংবা গ্রাহক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিলিন্ডারগুলো যখন রিফিল করা হয় তখন কোম্পানিগুলো নিজস্ব তদারকিতে এগুলোকে পরীক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আর ডিলার ও গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে।