গাড়ল পালনে লাভবান মুজিবনগর তারানগরের দবিরউদ্দিন

 

মহাসিন আলী/শেখ শফি: গাড়ল পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। মুজিবনগর উপজেলার তারানগর গ্রামের দবিরউদ্দিন গাড়ল পালন করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। তার দেখাদেখি গাড়ল পালনে ঝুঁকেছেন মেহেরপুর ও পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেকে।

মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মুজিবনগর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম তারানগর। ওই গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার দবিরউদ্দিন গাড়ল পালন শুরু করেন ২০০২ সালে।

গাড়ল পালনকারী দবিরউদ্দিন জানান, ২০০২ সালে তার ছেলে সিজির আলম মেহেরপুর বিটিসিতে (তামাক কোম্পানি) চাকরি করতো। ওই সময় সিজির আলম সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারে গাড়ল চাষে খরচ কম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। বাড়ি ফিরে বাপ-বেটা আলাপ আলোচনা করে ওই বছর ভারত থেকে ৩টি গাড়ল কেনে। ভারতীয় ওই গাড়ল দেশীয় ভেড়ার মতো দেখতে। তবে এটি উন্নতজাত ও এদের লেজ লম্বা হয়। তিনি গাড়লের সাথে দেশি ভেড়ার শঙ্কর জাতও করেছেন। এখন তার বাড়িতে দু শতাধিক গাড়ল ও শঙ্কর জাতের ভেড়া আছে। তিনি দলে মেড়া (পাঠা) হিসেবে রেখেছেন গাড়ল। শঙ্কর জাতের পুরুষ ভেড়া দল থেকে সরিয়ে ফেলেন আগে-ভাগে। তিনি বলেন, গাড়ল ও শঙ্কর জাতের ভেড়া উভয়ই মাঠে চরে খায়। তাই তাদের বাড়িতে খাওয়ানো জন্য তেমন কোনো খরচ নেই। রাতে মেড়াগুলোকে আলাদা করে রাখা হয় এবং বাড়িতে তাদের খাবার দিতে হয়। এছাড়া জন্মের পর এক সপ্তাহ গাড়লের বাচ্চা আলাদা করে রাখা হয়।

গাড়ল ও ভেড়াগুলো মাঠে চরানো এবং বাড়িতে দেখাশোনা ও পরিচর্চার জন্য ৩ জন লোক নিয়োগ করা আছে। দিনে তিনবার খাওয়া ও বছরে দুবার জামা-কাপড় প্রদান করার পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়।

দবিরউদ্দিন আরো জানান, গাড়ল বছরে দুবারে ২ থেকে ৮টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। দেড় বছর থেকে দু বছরের পূর্ণ একটি গাড়লে ৪০ থেকে ৫০ কেজি মাংস হয়। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাড়ল ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এই মুহূর্তে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে পালনের জন্য ৩ থেকে ৪ মাসের বাচ্চা বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রতি বছর গাড়ল পালন থেকে তার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ হয়। লাভ দিয়ে সংসার খরচ করার পাশাপাশি তিনি ২টি মাইক্রোবাস কিনেছেন ও ৩ বিঘা জমির ওপর পুকুর কেটেছেন। চলতি বছরে তিনি আরো দেড় বিঘা মাঠের জমি কিনেছেন।

রোগ বালাই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে দবিরউদ্দিন আরো বলেন, রোগ-বালাই যাতে কম হয় সেজন্য গাড়লের ঘর বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। মাটি থেকে প্রায় ৩ ফুট ওপরে ঘরে মাচার ওপর রাখা হয় গাড়ল। তারপরও মুজিবনগর উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের মাধ্যমে প্রতিটি গাড়লের খুরা বোগের জন্য বছরে তিনবার ও পিপিআর রোগের জন্য বছরে একবার প্রতিশোধক টিকা দিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে বাড়িতে গাড়লের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করা হয়।