গাংনীর তিন উদ্যেমী যুবকের উদ্যোগ কোঁচো কম্পোস্ট সার এখন চাষিদের আস্থার প্রতীক

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আকুবপুর গ্রামের তিন উদ্যোমী যুবকের গড়ে তোলা ভার্মি কম্পোষ্ট খামার এলাকার কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটিয়েছে। অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে উর্বর শক্তি কমে যাওয়া জমিতে আবারো প্রাণ ফিরে এসেছে। কেঁচো কম্পোষ্ট/ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রাও কমেছে। এতে জমিতে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি রাসায়নিক সারের খরচও সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

মেহেরপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হোগলবাড়ীয়া গ্রামে ২০১১ সাল থেকে মাত্র সাত কাঠা জমির ওপরে রাখাল অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড নামে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন খামারাটি শুরু করেছিলেন তিন বন্ধু। শিক্ষিত যুবক মহির উদ্দীন রাখাল, সুমন আহম্মেদ ও লেলিন আকাশ চাকরির জন্য সময় ব্যয় না করে নেমে পড়েন ভিন্ন কাজে। পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়েই গড়ে তোলেন কোঁচো কম্পোষ্ট খামার। শুরু থেকেই ধরা দিতে থাকে সাফল্য। ব্যবসার মুনাফা দিয়ে পুঁজি বাড়াতে থাকে। সাত কাঠা জমির সেই খামার আজ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ বিঘায়। শুরুতে মাত্র ৮টি উৎপাদন হাউজে ১ লাখ কোঁচো দিয়ে শুরু করলেও খামারে এখন হাউজের সংখ্যা ৬৪ এবং কোঁচোর সংখ্যা এক কোটির ওপরে। প্রতি মাসে গড় উৎপাদন ৪৫০-৬শ বস্তা (৫০ কেজি)। প্রতি কেজি সার বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব কেঁচো কম্পোষ্ট সার ব্যবহারে তাই দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। এই খামারে ১২ জন বেকার শ্রমিক পেয়েছেন কাজের সন্ধান।

সার উৎপাদনের বিষয়ে মহির উদ্দীন রাখাল বলেন, উদ্যেক্তা ও শ্রমিকরা মিলে বিভিন্ন স্থান থেকে গোবর সংগ্রহ করে তা উৎপাদন হাউজে ভরাট করেন। এর পরে তার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয় অষ্টেলিয়ার রেড-১ জাতের অসংখ্য কেঁচো। এই কেঁচো গোবর খেয়ে পায়খানার মধ্যদিয়ে বের করে দেয় উন্নত মানের কম্পোষ্ট সার। শুধু সার উৎপাদন নয়, কোঁচো থেকে যে বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে এখানকার হাউজ বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য উদ্যোক্তাদের কাছে খামার গড়ে তোলার জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু এলাকাতেই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানেও যাচ্ছে এখান উৎপাদিত ভার্মি কম্পোষ্ট সার।

উদ্যেক্তা সুমন আহম্মেদ জানান, এলাকার দরিদ্র চাষিদের কথা ভেবে ১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। যাতে সহজেই চাষিরা কিনতে পারেন। এতে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না হলেও এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। ১৯৯৭ সালে সরকারের এক জরিপে দেশের আবাদী জমিতে জৈব সারের ভয়াবহ ঘাটতি উঠে আসে। এতে রাসায়নিক সার আদমানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলে নানা রকম রোগ-বালাই দেখা দেয়। তখন থেকেই জৈব সার প্রয়োগে আরও জোর দেয় কৃষি বিভাগ। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি ও রাসায়নিক সার আমদানী কমাতে কেঁচো কম্পোস্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

গাংনী এলাকার চাষিরা জানালেন, প্রতি বছর নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় রাসায়নিক সার প্রয়োগেরও মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু ঘাটতি শুধু জৈব সারের। তাই ফসলনও হচ্ছেনা আশানুরুপ। নিরুপায় সেই কৃষকরা কোঁচো কম্পোষ্ট ব্যবহার করে মাটির উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছেন। এতে রাসায়নিক সারের খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। তাই চাষিদের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে রাখাল অ্যাগ্রো প্রাইভেট খামারের কোঁচো সার।

তিন যুবকের এই সফলতায় এলাকার অনেক বেকার যুবক স্বপ্ন দেখছেন। এখন থেকে হাতেকলমে প্রযুক্তি জ্ঞাণ অর্জন করে নিজেরাই গড়ে তুলছেন কোঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদন খামার। নতুন উদ্যেক্তা আকুবপুর গ্রামের শামীম হোসেন মিলনও রাখাল এগ্রোর পথ ধরে আজ স্বাবলম্বী। প্রবাসে যা আয় করতেন তার চেয়ে এখন অনেক বেশি আয় করছেন বলে জানালেন তিনি। তিন যুবকের সাফল্যে সাধুবাদ জানিয়ে, মাটির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে কম্পোস্ট সার প্রয়োগ বৃদ্ধির তাগিদ দিলেন মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান।