গাংনীতে ট্রাকমালিক জামায়াত সমর্থক ফকির মহাম্মদের ওপর হামলার প্রতিবাদ

মেহেরপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের বাসট্রাক ধর্মঘট

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর গাংনীতে ট্রাকমালিক ও জামায়াত সমর্থক ফকির মহাম্মদের (৪৫) ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলায় অনির্দিষ্টকালের বাস-ট্রাক ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাংনী হাসপাতাল বাজারে এ হামলার পর রাত ৯টার দিকে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন জেলা বাস-ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। রাত থেকেই জেলার সব রুটে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফকির মহাম্মদ বর্তমানে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাড়ি গাংনীর গাড়াডোব গ্রামে।

জেলা পুলিশসূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সাহারবাটি গ্রামে ফকির মহাম্মদের ট্রাকচালক ও হেলপারকে মারধর করে স্থানীয় টুটুল ও তার লোকজন। এ ঘটনায় শ্রমিক ইউনিয়নের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে সাহারবাটি গ্রামের শফি উদ্দীনের ছেলে টুটুলের ভাই লাভলু মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় গাংনী হাসপাতাল বাজার থেকে উত্তেজিত কিছু লোক ফকির মহাম্মদের ওপর হামলা চালায়। একটি ঘরে আটকে রেখে উপর্যুপরি নির্যাতন চালায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। গাংনী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় ফকির মহাম্মদকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে মেহেরপুর শহরে মাইকিং করা হয়।

জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় ফকির মহাম্মদকে গাংনী হাসপাতাল বাজারে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীর লোকজন হামলা চালায়। তাকে ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। পুলিশ গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মেহেরপুর হাসপাতালে তাকে দেখতে যান। দোষীদের নামে মামলা দায়ের করা হবে। তাদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

তিনি আরো বলেন, ফকির মহাম্মদের ট্রাক নিয়ে চালক ও হেলপার সোমবার সাহারবাটি গ্রাম থেকে সবজি বোঝাই করে ফিরছিলো। তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে সাহারবাটি গ্রামের চিহ্নিত ক্যাডার টুটুল ও তার ভাই লাভলুসহ কয়েকজন চালক ও হেলপারকে মারধর করে এবং ট্রাকের গ্লাস ভেঙে দেয়। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে টুটুল ক্ষিপ্ত হয়। এর জের ধরেই আহম্মেদ আলীর লোকজন দিয়ে টুটুল এ কাণ্ড করেছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম রসুলসহ মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

এদিকে গাংনী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আহম্মেদ আলী অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেছেন, ফকির মহাম্মদ একজন জামায়াত নেতা। গাড়াডোব গ্রামে পুলিশের ওপর হামলা তার নেতৃত্বেই হয়েছিলো। হরতালের মধ্যে সে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার উদ্দেশে গাংনী বাজারে অবস্থান করছিলো। স্থানীয় লোকজন এমন সন্দেহে তাকে মারধর করেছে। পরে তিনিসহ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে প্রেরণ করেন। কিন্তু বিষয়টি অন্যদিকে নেয়া হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের ৬০ ঘণ্টা হরতালের শেষ দিনে শহীদ হাসান চত্বরে পুলিশি ব্যারিকেট ভেঙে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি মিছিল বের করে। গতকাল জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে সকাল ১০টায় মিছিলটি বের হয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

হরতালের মিছিল শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সামনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. আ.স.ম. আব্দুর রউফ, চুয়াডাঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টু, পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মালিক মজু, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা বিমান, রবিউল ইসলাম লিটন, অ্যাড. বদিউজ্জামান, জেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মোকারম হোসেন, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মখলেছুজ্জামান মোখলেছ, মুকুল জোয়ার্দ্দার, তৌফিকুজ্জামান তৌফিক, আতিয়ার রহমান লিটন, রফিকুল ইসলাম তনু, আরিফুজ্জামান পিন্টু, এসকে হাদী, মামুন রেজা সবুজ, হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সুশীল কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন অধিকারী, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর জামান সিজার, সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক এমএ তালহা, যুগ্মআহ্বায়ক রাজিব খান, সুজন মালিক, মাহাবুবুর রহমান খোকন, অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, শাহাদত মাস্টার, আব্দুল রাজ্জাক, ফারুক আহম্মেদ, মিলন মিয়া, আব্দুর ছাত্তার মুন্সী, শাহনাজ কালু, বাদশা শেখ, আবুল বাসার, মহিদুল ইসলাম, আকতার হোসেন, মজনু মণ্ডল, আহসান হাবীব মুক্তি প্রমুখ। ৬০ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করায় চুয়াডাঙ্গাবাসীকে অভিনন্দন জানায় জেলা বিএনপি।

এদিকে হরতালের শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা দলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কোর্টমোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছুলে পুলিশের বাধায় পড়ে পুনরায় কোর্ট মোড়ে ফিরে যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা মহিলা দলের একাংশের সভানেত্রী রউফুন নাহার রীনা। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি একাংশের সহসভাপতি সদর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. জাহাজাহান মুকুল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাসান ঈমাম বকুল, যুগ্মসম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মনি, দপ্তর সম্পাদক আবু আলা সামছুজ্জামান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম, যুবদল সদস্য সাইফুর রশীদ ঝন্টু, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সহসভাপতি আওরঙ্গজেব বেল্টু, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লা ছটি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজাহান খান প্রমুখ।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা লে. কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ কামরুজ্জামানের সমর্থিত দল হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রূপছায়া সিনেমা হলের সামনে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আব্দুল ওহাব মল্লিক। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলী হোসেন। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য মহাসিন আলী, মফিজুর রহমান মনা, জেলা যুবদলের সদস্য সৈয়দ শফিকুল আলম বিলাস,  বিএনপি নেতা শহর আলী, আলমগীর কবির, মোজাম্মেল হক প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থিতরা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কোর্টমোড়স্থ কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক আইনুর হোসেন পচা। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্যজীবীস দলের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল। বক্তব্য রাখেন জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম ওহিদ, জেলা কুষকদলের সভাপতি হামিদুল হক নেতাজী, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গার জেলা সদরের মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে সারাদেশে বিএনপির ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাটি মোমিনপুর ইউনিয়ন ও মুন্সিগঞ্জ বাজার হয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজরের শাহীদ হাসান চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। গতপরশু অবশ্য গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার স্থানীয় আওয়ামী লীগের অপরঅংশের নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। দলীয়ভাবে বলা হয়েছে, সারাদেশে ডাকা বিএনপির আহুত হরতালের বিরুদ্ধে গতকাল বেলা ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাটি মোমিনপুর ইউনিয়ন হয়ে আলমডাঙ্গার জেহালার মুন্সিগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়। শোভাযাত্রাটি চুয়াডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গার বড় বাজার চৌরাস্তা মোড়ে গণসমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আব্দুর হান্নান, প্রচার সম্পাদক শওকত, মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফিন আলম রঞ্জু, যুগ্মআহ্বায়ক আসাদুর জামান কবীর, যুবলীগ নেতা লালা, আসমান, সুমন, তারেক, টুটুল, জাবেদ, রুবেল, জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক আবু হান্নান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিরাজুল ইসলাম কাবা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক, জেহালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইন উদ্দিন, জেহালা ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা নয়ন, শিলনসহ আরো অনেকে। বক্তারা বলেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেত্রী খালেদা জিয়া মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তিনি নিজেই গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না। দেশে অবৈধ হরতাল ডেকে দেশের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। নির্বিচারে মানুষসহ পুলিশ হত্যা করছে। দেশে কোনো প্রকার নৈরাজ্যের সৃষ্টি করলে বাংলাদেশের ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জ থেকে নেতাকর্মীরা এসে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। বক্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেলার আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছে, হরতালে শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ  বাজারে  হরতালকারীরা সকাল ৯টার দিকে সরোজগঞ্জ প্রবেশ পথ ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বন্ধ করে দেয়। ১৮ দলের নেতাকর্মীরা সরোজগঞ্জ মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি সরোজগঞ্জ বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরোজগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সরোজগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন থাকলে  কৌশলগতভাবে হরতালকারীরা চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের ডিঙ্গেদহ, পাঁচমাইল, সরোজগঞ্জ ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে, সরোজগঞ্জ খাদ্যগুদামের সামনে, ৯ মাইল ও বদরগঞ্জ বাজারে প্রবেশ মুখ বন্ধ করে রাখে। এ সময় সরোজগঞ্জ, বদরগঞ্জ, ডিঙ্গেদহ বাজারের সকল দোকান বন্ধ ছিলো। কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।

জীবনগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিনেও জীবননগর ছিলো বেশ উত্তপ্ত। উপজেলা বিএনপির একাংশ নোয়াব আলী গ্রুপ ও পৌর বিএনপি মোজাম্মেল হক গ্রুপ হরতাল সফল করতে জঙ্গী মিছিল করে। পুলিশ ও বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট তাদের ৩ দিনের হরতালের শেষ দিন অতিবাহিত করে। উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি পৌর মেয়র নোয়াব আলীর নেতৃত্বে নোয়াব আলী গ্রুপ সকাল ১০টার দিকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় হরতাল সফল করায় সকলকে ধন্যবাদ এবং অবিলম্বে অবৈধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে সভাপতির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি পৌর মেয়র নোয়াব আলী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আক্তার রিনি, যুবদল সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র মশিউর রহমান, পৌর কাউন্সিলর হযরত আলী, কাউন্সিলর সামসুজ্জামান হান্নু, বিএনপি নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক, মজনুর রহমান, আবুল হোসেন তোয়া, আনিছুর রহমান শিপলু, হারুন অর রশিদ, তাজুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা হাসান, আশরাফুল ইসলাম রয়েল, বাপ্পা, বিল্লাল, আপিল, কুদ্দুস, বিশারত আলী প্রমুখ।

জীবননগর পৌর বিএনপির উদ্যোগে হরতালের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইদুর রহমান ধুন্দু, পৌর বিএনপি সভাপতি সাহজাহান কবীর ও সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শেষে হাসপাতাল সড়কের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে অবৈধ এ সরকারের ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ দাবি করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান ধুন্দু, সাহজাহান কবীর, মাহতাব উদ্দিন, আব্দুল খালেক, সাবদার রহমান, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম, পৌর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রবি সর্দার, আহাম্মদ আলী, পৌর কাউন্সিলর নবী শাহ্, শ্রমিক নেতা শওকত আলী, মোহাম্মদ আলী সান্টু, বাবুর আলী, ছানোয়ার হোসেন, আব্দুল আলীম, আমিনুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন, বদরউদ্দিন বাদল, সিরাজুল ইসলাম, আলম, সেলিম, আতিয়ার রহমান, আমিনুল ইসলাম ফজলুর রহমান যুবদল নেতা মনির, হামিদ, বকুল, আজমত, ছাত্রদল নেতা আরিফ, শামীম, খোকন, জুয়েল, রাসেল, ডালিম, মিঠু, জাহিদ, মানিক, সাইদুর, মামুন, দেবাশীষ প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, হরতালের শেষ দিনে আলমডাঙ্গায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা ও পৌর বিএনপি। এ সময় ৩টি দোকানে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সকাল ১১টায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলু, সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পৌর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসরাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে। এদিকে অভিযোগ করা হয়েছে হরতালের সমর্থনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ নেতা মনি খন্দকারের মনোরমা গার্মেন্টস, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু মুসার ভাই হারুন অর রশিদের কসমেটিকসের দোকান ও সোমাইয়া গার্মেন্টসে ভাঙচুর করা হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল বিকেলে আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় অফিসে সমাবেশ করে। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু মুসার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওরঙ্গজেব মোল্লা টিপু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, হারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী নুরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম মন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী খালেদুর রহমান অরুন, আলম হোসেন, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা তবারক হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিন, বিআরডিবির চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক মহিদুল ইসলাম মহিদ, খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুনু, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ দেব শর্মা, উপজেলা যুবলীগের যুগ্মআহ্বায়ক সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক টগর, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আজিজুল  হক, মনা, আব্দুল গাফ্ফার, সোনাহার, ডিটু, মিঠু, সৈকত খান প্রমুখ।

অপরদিকে আলমডাঙ্গা ব্যুরো আরও জানিয়েছে, গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে হরতালবিরোধী মোটরসাইকেল মিছিল বের করা হয়। ডিগ্রি কলেজ থেকে বের হয়ে হরতালবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালমুন আহমেদ ডন, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক পিন্টু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পিন্টু, পৌর ছাত্রলীগের সম্পাদক তমাল, মুকুট, রনি, সাহাবুদ্দিন, শুভ, মিলন, তজবির, মুন্না, জুবায়ের, সুরুজ, সুমন প্রমুখ।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালনে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ পূর্নসহযোগিতা করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে ১৮ দলের উপজেলা জেলা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী শাহসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। তিনি আগামী দিনে সরকার পতনের যেকোনো আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়াত-শিবিরের হরতাল সমর্থকরা। এ সময় হরতাল সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে। হরতালের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে রাজনগরে জামায়াত-শিবিরেরকর্মীরা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করতে থাকে। খবর পেয়ে মেহেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে হরতাল সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল ছুড়ে মারে। তবে ককটেলটির বিস্ফোরণ ঘটেনি। পরে পুলিশ অবিস্ফোরিত ককটেলটি উদ্ধার করে এবং সড়কের আগুন নিভিয়ে দেয়। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ওসি রিয়াজুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, পুলিশের তৎপরতায় তারা সড়ক অবরোধ করতে পারেনি।

এদিকে মঙ্গলবারও সন্ধ্যা পর্যন্ত দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীন সকল সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে ছোট ছোট যানবাহন ও রিকসা চলাচল করেছে। সকালের দিকে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও দুপুরের পর থেকে দোকানপাট খুলতে থাকে। অফিস-আদালত খোলা থাকলেও লোকজনের উপস্থিতি খুবই কম ছিলো। ব্যাংক-বীমায় লেনদেন হয়েছে সন্তর্পনে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কম ছিলো। তবে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। শহরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিলো। সাথে র‌্যাবের টহল চলছিলো।

মেহেরপুর অফিস আরও জানিয়েছে, সকালে মেহেরপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে তা পণ্ড হয়। বিএনপির শাহাজীপাড়াস্থ কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের এসআই কামালের নেতৃত্বে প্রায় এক প্লাটুন পুলিশ বিএনপির কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে। সকাল ১০টার দিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আনছার-উল হকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে তা পণ্ড হয়। পরে দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আনছার-উল হকের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আনারুল হক কালু, মেহেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি বিএনপি নেতা মুজিবুল হক খান চৌধুরী হেলাল, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বড় বাবু, যুগ্মআহ্বায়ক প্রভাষক ফয়েজ মোহাম্মদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. মোস্তাকিম, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তপন, সহসভাপতি রুহুল আমিন, আনিছুর রহমান লাবলু, যুগ্মসম্পাদক সামছুল আযম লিন্টু ও মাহিনুর বাবু, প্রচারসম্পাদক ইমন বিশ্বাস, সদর থানা যুবদলের সহসভাপতি জাহিদ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান পলাশ, যুবদল নেতা একরামুল হক একা, আজমল হোসেন মিন্টু, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মীর আলমগীর ইকবাল, ছাত্রদল নেতা জনি, সানি, রনি, কল্লোল, রিজভী, লিটন, রিপন, মিন্টু প্রমুখ।