খোস আমদেদ মাহে রমজান

 

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ১৯ রমজান। পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরাতের দশক বিদায় নেয়ার পথে। রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিতরা অর্থাৎ সদকাতুল ফিতর। প্রকৃতপক্ষে রমজান আমাদেরকে শিক্ষা দেয় সাম্য-সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার। এ কারণেই ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বেই ফিতরা আদায়ের আদেশ দেয়া হয়েছে যাতে অভাবী,গরিব-দুঃখিরাও ঈদের আনন্দ মিছিলে শরিক হতে পারে। ফিতরা আসলে রোজার জাকাত। জাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে ঠিক তেমনি ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে অর্থাৎ রোজায় যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় ফিতরা তার ক্ষতিপূরণ করে এবং সহীহভাবে রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সাঃ.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে অন্ন দেয়ার জন্য (মেশকাত: আবু দাউদ)। ফিতরা আদায় করা সামর্থবানদের ওপর ওয়াজিব। শরিয়তের পরিভাষায়, ঈদুল ফিতরের দিন সোবেহ সাদেকের সময় যার নিকট জাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে শুধু তার ওপরেই সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। তবে জাকাতের নেছাবের ক্ষেত্রে ঘরের আসবাবপত্র বা ঘরের মূল্য ইত্যাদি হিসেবে ধরা হয় না। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অন্যান্য আসবাবপত্র,সৌখিন দ্রব্যাদি,খালি ঘর বা ভাড়ার ঘর (যার ভাড়ার ওপর তার জীবিকা নির্ভরশীল নয়) এমন কিছুর মূল্যও হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ গরিবের সাহায্য, সহযোগিতার দিকটাই এক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পায়। ফিতরা শুধু রোজার সাথেই সম্পর্কিত এবং তা ঈদের জামাতের পূর্বেই আদায় করা উত্তম। কারণ হাদিসে হুজুর (সা.) ঈদের নামাজের পূর্বেই তা দিতে বলেছেন। এক হাদিসে ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি রমজানের শেষের দিকে বললেন, তোমরা তোমাদের রোজার জাকাত (ফিতরা) আদায় কর। নবী করিম (সা.) প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তি ও কৃতদাস,পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড় সকলের ওপর এ জাকাত এক সাআ খেজুর ও যব অথবা আধা সাআ (প্রায় ১ কেজি ৬৬২ গ্রাম) গম নির্ধারণ করেছেন (মেশকাত: আবু দাউদ,নাসায়ি)। তবে এটা হলো ন্যূনতম পরিমাণ। কেই ইচ্ছে করলে এর বেশিও দিতে পারে। এটা তার জন্য বাড়তি ছওয়াবের কারণ হবে। ফিতরা গরিব-নিঃস্বদের হক। তাই আসুন আমরা এ সদকায়ে ফিতরাকে গরিবের মাঝে বণ্টন করি এবং আল্লাহ তওফিক দেয় তো আরও বেশি বেশি দান করি ও মাওলার রেজা-মন্দি হাসিল করি।