খোশ আমদেদ মাহে রমজান

 

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ১৬ রমজান। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল মহিমান্বিত ও পূণ্যময় মাহে রমজানের অর্ধেক। তাকওয়া অর্জনের সাথে সাথে আত্মসংযম, সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেয় এ পবিত্র রোজার মাস। রোজার মাধ্যমে ভূখা-নাঙ্গা ও গরিব মানুষের কষ্টের কথা মনে আসে। পিপাসা ও ক্ষুধার যে কি জ্বালা তা রোজার মাধ্যমে কিছুটা অনুভব করা যায়। এতে ক্ষুধার্ত ও বিপদগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা পয়দা হয়। হযরত ইউসুফ (আ.) কে লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- আপনি ভুখা থাকেন কেন,অথচ আসমান ও জমিনের ধন-ভাণ্ডার তো আপনার করায়ত্ত?তিনি বললেন, আমি আশঙ্কা করি,পেট ভরে আহার করলে ভুখাদেরকে ভুলে যাব। রোজা আমাদেরকে খানাপিনাতে কম খরচের শিক্ষা দেয়। রোজার কারণে ব্যয় কমে যায় এবং খরচ বেঁচে যায়। বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত অর্থ আমরা গরিবদের মাঝে দান খয়রাত করে দিতে পারি। কিন্তু আমাদেরবেলায় ঘটে তার উল্টা। রোজার মাসে বাজেট ঘাটতি পড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এটা কিছুতেই রোজার শিক্ষা হতে পারে না। আমাদের উচিত রোজার মাসে অতিরিক্ত খরচ থেকে কিছু কিছু বাঁচায়ে দুস্থ ও অভাবীদের সাহায্য করা এবং তাদের কষ্টের সাথে কিছুটা হলেও সহমর্মিতা প্রকাশ করা। এক দীর্ঘ হাদিসের এক অংশে হুজুর (সা.) বলেন, রমজান মাস সবরের মাস। আর সবরের বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত। ইহা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। ইহা সেই মাস যাতে মুমিনের রিজিক বিদ্ধ করা হয়। যে এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে,এটা তার জন্য গোনাহ মাফ এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া ইফতার করানোর কারণে সে রোজাদারের সমান ছওয়াব লাভ করবে যদিও তার ছওয়াব কম করা হবে না। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের প্রত্যেকে তো এ সামর্থ্য রাখে না যে রোজাদারকে পরিপূর্ণভাবে ইফতার করাবে?হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা এ ছওয়াব দান করবেন যদিও সে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় একটি খেজুর,এক ঢোক পানি অথবা এক চুমুক দুধ দ্বারা। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে তাকে আল্লাহতায়ালা আমার হাউজে কাওছার হতে এমন পানি পান করাবেন যাতে জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো পিপাসা লাগবে না। ইহা এমন মাস যার প্রথম দিকে রহমত,মধ্য ভাগে মাগফেরাত এবং শেষ দিকে জাহান্নাম হতে নাজাত রয়েছে। যে এ মাসে দাস দাসীদের ওপর কাজের ভার লাঘব করে দিবে আল্লাহপাক তাকে মাফ করে দিবেন এবং দোজখ হতে মুক্তি দিবেন (বায়হাকি শো’আবুল ইমান, ইবনে হিব্বান, তারগিব)। তাই আসুন, আমরা এ মাসে অপরের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিই এবং আল্লাহর মাগফেরাত লাভে ধন্য হই।