খোরপোষের দাবি তুলে আদালতে স্ত্রীর মামলা : স্বামীর পাল্টা মামলা!

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের এক অসহায় নারী খোরপোষের দাবি তুলে আদালতে মামলা করায় স্বামী তার স্ত্রীকে শিশু পাচারকারী অভিযোগ তুলে আদালতে পাল্টা মামলা করেছে। এছাড়া তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে অপহরণ করে খুন-গুম করাসহ মিথ্যা খুনের মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। ওই ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এদিকে অসহায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বিচারের আশায় সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

মেহেরপুর শহরের মুখার্জীপাড়ার মৃত আলাউদ্দিনের মেয়ে জুলেখা খাতুন। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পরে ২০১১ সালের ৬ ফ্রেরুয়ারি গাংনীর উত্তরপাড়ার আব্দুল লতিফের ছেলে ফরিদুল ইসলামের সাথে এক লাখ এক টাকা দেনমহরে ২য় বিয়ে করে জুলেখা। ওই ঘরে তার গর্ভে আসে এক কন্যাসন্তান। তার নাম রাখা হয় ফারহানা। জুলেখার অভিযোগ তার বর্তমান স্বামী ফরিদুল বিয়ের সময় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক গ্রহণ করে। বর্তমানে আরো এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি দিয়ে তার ওপর নির্যাতন করছে। যৌতুক দিতে না পারায় প্রায় ৪ মাস আগে জুলেখাকে তাড়িয়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে সে তার পিতার বাড়ি উঠেছে। বর্তমানে সে অসহায় জীবনযাপন করছে। নিরূপায় হয়ে সে আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি এবং দেনমহর ও খোরপোষ বাবদ ৫ লাখ টাকা দাবি আদায়ে আদালতে আরো একটি মামলা করেছে। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী ফরিদুল ইসলাম স্ত্রী জুলেখা খাতুনকে শায়েস্তা করতে তার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা-পাল্টা মামলার ঘটনার ফরিদুল ইসলামে গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। কেঁচো তুলতে সাপ উঠতে শুরু করেছে।

জুলেখা জানিয়েছে, তার স্বামী ফরিদুল ইসলাম এ পর্যন্ত ৫টি বিয়ে করেছে। দু বউ তাকে বাদ দিয়ে চলে গেলেও তার এখনও ৩ বউ রয়েছে। জুলেখা আরো জানায়, তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী ময়না খাতুন গাংনী র‌্যাব ক্যাম্পের পাশের আফজাল শরিফের মেয়ে। তার ঘরে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে। ২য় স্ত্রী মর্জিনা খাতুন। ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টারিতে কাজ করতো সে। তার ঘরে দুটি কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে। জুলেখার ঘরে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। এছাড়া তাকে ছেড়ে যাওয়া স্ত্রীদের এক জনের ঘরে রয়েছে আরো একটি কন্যাসন্তান। একটি পুত্রসন্তানের আশায় স্বামী ফরিদুলের ইচ্ছায় তার ২য় স্ত্রী মর্জিনার চাচাতো বোন শিরিনার নিকট থেকে এক দিনের একটি পুত্র সন্তান দত্তক নেয় জুলেখা। এর বিনিময়ে খুশি হয়ে স্ত্রী জুলেখা আমঝুপি গ্রামের সাইদুর রহমানের ২য় স্ত্রী শিরিনাকে ৩২ হাজার টাকা দেয়। পরে জুলেখা ওই শিশুটিকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক হয়ে গাংনী স্বামীর যাওয়ার পথে বারাদী বাজারে পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে মেহেরপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আল মামুন ও আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের উপস্থিতিতে মেহেরপুর সদর থানায় একটি মীমাংসা হয়। যেখানে জুলেখা তার প্রদত্ত টাকা ও শিরিনা তার সন্তান ফেরত পায়। এ বিষয়ে গত বছরের ২৭ আগস্ট দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়।

এদিকে জুলেখার স্বামী ফরিদুল ইসলাম ওই সুযোগকে কাজে লাগাতে স্ত্রীকে শিশু পাচারকারীর অভিযোগ এনে মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে।

জুলেখা আরো জানায়, তার স্বামী নারীলোভী ফরিদুল একজন মাদকসেবী। তাই মাঝে মধ্যে খুলনার একটি মাদক ও তামাকবিরোধী সংগঠন মনড্রপস’র সমন্বয়কারী এমএ মজিদের নিকট চিকিৎসা নিতে যায়। এদিকে ফরিদুল জুলেখার ১ম স্বামীর পক্ষের প্রতিবন্ধি সন্তানকে তুলে নিয়ে খুম-গুম করার হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী সন্তানের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে জুলেখা আরো জানায়।