উত্তরা হিমেল হাওয়ায় দরকার বাড়তি সতর্কতা

মিশ্র আবহওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সর্দিকাশি টনসিল চর্মরোগসহ নানান ব্যাধি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আগেভাগেই শীত জেকে বসেছে। গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ রেকর্ডে অবশ্য গতকাল ভাগ বসিয়েছে দিনাজপুর। সৈয়দপুরে গতকাল বুধবার আরো এক ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমে ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকালও সীতাকুণ্ডে ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

images

আগাম শীতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্যই হলো- দিনে গরম, রাতে শীত। আবহাওয়ার এ মিশ্র অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে সর্দি-কাশি, টনসিল, চর্মরোগসহ নানান ব্যাধি। চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আগাম শীতে এবার এসব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বহুলাংশে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে দরকার বাড়তি প্রস্তুতি। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাববুব হাসান মিলন বলেন, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে শিশু ও প্রবীণদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের প্রতি আরও সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। এ মরসুমে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া থাকে গরম। ফ্যান চালিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখতে হয়। সন্ধ্যার পর অল্প অল্প করে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। তাই অনেকেই পাতলা কাঁথা বা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমান। অনেক সময় কাঁথা গায়ে ঘুমানোর সময় গরম লাগে। এ কারণে রাতে পাখাও ছেড়ে রাখেন অনেকে। শীতের তীব্রতা বাড়লেও আলসেমি করে বিছানা থেকে উঠে ফ্যান বন্ধ করা হয় না। এর কুফল হিসেবে আসে সর্দি, কাশিসহ আরও কিছু শারীরিক সমস্যা। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাতে ঘুমানো আগে ফ্যানের গতি কমিয়ে রাখুন। শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেহেতু বেশি সেহেতু একটু অসতর্কতার ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। ফলে সাবধান! আর শীতের কপনি থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে গিয়েও সতর্ক হতে হবে। সামান্য অসতর্কতাতেই ঝলসে যেতে পারে শরীর। শীতের সকালের রোদ? সে তো বরাবরই উপকারী।

শিশু বিশেষজ্ঞ বললেন, শীতের সময় শিশুদের প্রস্রাবের বেগ বেশি থাকে। রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে বেশিক্ষণ থাকলে তা থেকে সর্দি-কাশি ও চর্মরোগ হতে পারে। শিশুদের ঠাণ্ডা লাগলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঠাণ্ডা আর গরমের এই মিশ্র আবহাওয়া সতর্ক থাকতে আরও কিছু দিক লক্ষ্য রাখতে হবে। শীতে উত্তর দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকে। এ সময় বিশেষ করে শিশুদের থাকার ঘরে উত্তরের জানালা বেশি সময় খোলা রাখা যাবে না। বড়দের মতো শিশুরা হঠাত আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না।

এ সময়ের সতর্কতা-

*রাতের ঘুমানো আগে ফ্যানের স্পিড কমিয়ে রাখুন। *বাস, ট্রেন বা লঞ্চে- দূর পথের যাত্রায় ঠাণ্ডা বাতাস থেকে যাতে সর্দি, কাশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। দরকার হলে মাফলার ব্যবহার করুন। *শিশুদের গায়ে যেন সরাসরি কুয়াশা না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। *যারা মোটরসাইকেল চালান, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে শীতের পোশাক, উইন্ডব্রেকার বা ভেস্ট সাথে রাখুন। মাথায় হেলমেট তো থাকছেই। *শীতে অপরিচ্ছন্ন থাকলে চর্মরোগ হতে পারে। নিয়মিত গোসল ও পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় ব্যবহার করুন। *যাদের ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা বেশি, তারা সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাসে না থাকলেই ভালো করবেন। *ঘরে কাপড়ের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন। *সকালে শিশুদের শরীর অলিভ অয়েল অথবা সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করুন। প্রবীণরাও শরীরে তেল ব্যবহার করতে পারেন। *যাদের টনসিল, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি আছে তারা ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম, বরফ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। *শিশুদের ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা কোনো খাবার বা আইসক্রিম খাওয়াবেন না।

শরীর খারাপ করলে যা করবেন- ভাইরাস আক্রান্ত হয়েই এ সময় অধিকাংশ রোগব্যাধি হয়। ঠাণ্ডা লেগে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা হতে পারে। জ্বর সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। সর্দি পুরোপুরি ভালো হতে কারও কারও ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে। শিশুদের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ আবহাওয়াতে যে কারও গায়ে ঘামাছির মতো দানা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চর্মরোগ সাধারণত অপরিচ্ছন্নতার কারণে হয়। শরীরে এ সমস্যা দেখা দিলে নিমপাতা সিদ্ধ করা পানিতে গোসল করতে পারেন। এছাড়া হাম হলে শুধু নিমপাতার ডাল ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে গায়ে বারবার বুলিয়ে নিলেও উপশম হয়।  বাড়িতে নিমগাছ থাকলে মশার উপদ্রব কমবে। রোগব্যাধিও কম ছড়াবে। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় ত্বক ফেটে যেতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। টনসিলের সমস্যা থাকলে ঠাণ্ডা পানি ও খাবার যতো কম খাওয়া যায় ততোই ভালো। গোসলের সময় গায়ে গরম পানি দিলেও মাথায় দিন ঠাণ্ডা পানি। কারণ মস্তিষ্ক সবসময় উষ্ণ থাকে। মাথায় গরম পানি দিলে অসুস্থ শরীরে মেজাজ আরও খিটখিটে হতে পারে। শীতল পানি মেজাজ ঠাণ্ডা রাখে। শীতকালীন রোগব্যাধিতে নিজে নিজে কোনো ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা বলেছেন, যাদের ট্যাবলেট বা সিরাপজাতীয় অষুধ খেলে সমস্যা হয় তারা সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যাথায় প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ইউনানি ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া টনসিলের ব্যাথা উপশমের জন্য বিভিন্ন রকম ইউনানি তেল বা ‘ম্যাসাজিং অয়েল’ আছে।  শরীরের যেসব জায়গার ত্বক ঢাকা যায় না যেমন- মুখমণ্ডল, হাতের কব্জিতে এ তেল লাগালে শীতের প্রকোপ কম অনুভূত হয়। মাথা ব্যথা ও সর্দি কাশিতে এগুলো মালিশ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।