উত্তরায় তাইওয়ানী দম্পতি হত্যাচেষ্টা : নারীসহ আটক ৪

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী তাইওয়ানের এক দম্পতি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এক মহিলাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। পাওনা টাকা না দেয়ায় এবং বাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা লুটে নেয়ার সূত্র ধরেই বিদেশি দম্পতির ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। আহত দম্পতির মধ্যে স্ত্রী সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। স্বামীকে ঢাকার এ্যাপোলা হাসপাতাল থেকে তাইওয়ানে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাইওয়ানের একটি হাসপাতালে আহত স্বামী প্রায় এক বছর ধরে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। গত ৫ নবেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৪ নম্বর সেক্টরের ১৪/এ নম্বর সড়কের ৮ নম্বর বাড়িতে এই তাইওয়ানী দম্পতির ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ওয়াং মিং চি (৫৪) ও তার স্ত্রী লিও লি হুয়া (৫০) দম্পতি গুরুতর আহত হন।

এই দম্পতি প্রায় দশ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছেন। তাদের গাজীপুরের জয়দেবপুর বড়গাছা এলাকায় জিন জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। কারখানাটিতে পিভিসি ডোর ও সিলিং তৈরি হয়। হামলার ঘটনায় কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সামির হাসিব বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১’র একটি দল উত্তরার আজমপুর থেকে মামলার আসামি সাজু মিয়াকে (২৮) আটক করে। তার পিতার নাম আব্দুর রহিম মিয়া। বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন চামুরগাছা পার্বতীপুর গ্রামে। পরে সাজুর তথ্য মোতাবেক তার বড়ভাই লাজু মিয়াকে (৩০) আশুলিয়া থেকে এবং এবায়দুল হক স্বপনকে (২৪) নারায়ণঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আটক করা হয়। স্বপনের পিতার নাম এমরান মোল্লা। বাড়ি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন ঝিরাইতলী গ্রামে। আটক তিন জনের দেয়া তথ্য মোতাবেক গাজীপুর জেলার টঙ্গীর বোর্ডবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় হামলার শিকার তাইওয়ান দম্পতির গৃহকর্মী হালিমা বেগমকে (৪৫)। হালিমার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন দত্তগ্রামে।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, ওই দম্পতির কোম্পানিতে কর্মরত ছিলো আটককৃত সহোদর সাজু মিয়া ও লাজু মিয়া এবং জাহাঙ্গীর (৪০) ও ওবায়দুল হক স্বপন (২৪) নামের আরও দু’জন। তারা কোম্পানির কাছে বকেয়া বেতন পেত। এ নিয়ে কোম্পানি মালিকের সঙ্গে তাদের অনেক দিন ধরেই ঝামেলা চলছিলো। দরিদ্র কর্মচারীরা বকেয়া আদায়ে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোন উপায়ন্তর না দেখে তারা ওই দম্পতির গৃহকর্মী হালিমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।

উল্লেখ্য, হালিমার সাথে আটক সাজুর আগ থেকেই যোগাযোগ ও পরিচয় ছিলো। সাজুই হালিমাকে দেড় বছর আগে ওই বাড়িতে কাজ পাইয়ে দেয়। সেই সুবাদে হালিমা তাদের বকেয়া টাকা উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। তারা সহজ পদ্ধতিতে টাকা উদ্ধার না হওয়ার আশঙ্কায় ওই দম্পতির বাড়ি থেকে টাকা পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক হালিমা ওই দম্পতির অগোচরে বাড়ির দরজার চাবি তাদের কাছে দেয়। তারা দ্রুত চাবি বানিয়ে আবার তা হালিমার কাছে ফেরত দেয়। হালিমা তা যথারীতি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দেয়। বিষয়টি ওই দম্পতি জানতে পারেনি। হালিমা ওই দম্পতি কবে বাসায় বেশি টাকা পয়সা রাখে তার খবর রাখতে থাকে।

গত ৫ নবেম্বর ওই দম্পতি বাসায় অনেক টাকা নিয়ে রাখছে বলে অনুমান করে হালিমা ওদের জানায়। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার রাতে হালিমা ওই দম্পতিকে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। ঘুমের ওষুধগুলো আটককৃতরা আগেই হালিমার কাছে দিয়েছিলো।

এরপর আটক হালিমা ছাড়া অন্যরা নকল চাবি দিয়ে গেট খুলে ভেতরে ঢোকে। দরজার তালা খোলার সময় জোরে শব্দ হলে ওয়াং মিং চি বেরিয়ে আসেন। আসামিদের চিনতে পেরে ওয়াং লাজুকে জাপটে ধরেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে লাজু লাঠি দিয়ে ওয়াং মিং চির মাথায় আঘাত করে। তার চিৎকারে তার স্ত্রী জেগে গেলে তাকেও মারধর করে। তার কাছ থেকে স্টিলের সিন্দুকের চাবি নিয়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই দম্পতির চিৎকারে বাড়িটির তৃতীয় তলায় থাকা কোম্পানির আরেক ম্যানেজার মিকো নিচে আসার আগেই আসামিরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই দম্পতিকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওয়াং মিং চিকে লাইফ সাপোর্ট রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে তাইওয়ানে স্থানান্তর করা হয়। ওয়াং এখনও কোমায় রয়েছেন। তিনি তাইওয়ানে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।