আলমডাঙ্গার পাচঁকমলাপুর রহস্যজনক দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় : পরিকল্পিত হত্যা বলে গুঞ্জন

 

বিয়ের দাবি পূরণের ১৫ দিনের মাথায় লাশ হলেন মিনারা

সদরুল নিপুল/অনিক সাইফুল: দেহভোগের অভিযোগ তুলে বিয়ের দাবি পূরণ হলেও বাঁচতে পারলো না দরিদ্র মিনারা খাতুন। বিয়ের মাত্র ১৫ দিনে মাথায় গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে রহস্যজনক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। মায়ের মৃত্যুতে অনাথ দু সন্তান পড়েছে অথৈ সাগরে।

আলমসাধুর চাকা ভেঙে আলমসাধুর নিচে পড়ে সদ্য বিবাহিতা দু সন্তানের জননী আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুরের ভিক্ষুক মিনারার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হলেও বেলা গড়ানোর সাথে সাথে পরিকল্পিত হত্যা বলে গুঞ্জন উঠতে থাকে। অভিযোগর তীর ১৫ দিন আগে বিয়ে করতে বাধ্য হওয়া পাঁচকমলাপুরের সলেমের দিকে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামের সদ্য বিবাহিত মসলেমের দ্বিতীয় স্ত্রমিনারা (৩৫) গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে আলমসাধু উল্টে চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

গ্রামবাসী জানায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে মিনারা বাড়ি থেকে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়। গ্রামের শফি সরদারের ছেলে মাসুদের আলমসাধুযোগে পাঁচকমলাপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া সড়কে এলে আলমসাধুর সামনের চাকা খুলে আলমসাধুটি আঁছড়ে পড়ে। এ সময় আলমসাধুর চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারাত্মক আহত হয় মিনারা। স্থানীয়রা তাকে উদ্বার করে একটি বাড়িতে নেয়। তার কিছুক্ষণের মাথায় তিনি মারা যান। সংবাদ পেয়ে পাঁচকমলাপুর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এএসআই (এবি) আলমসাধুটি আটক করে লাশ উদ্ধার করে। আলমসাধুচালক পালিয়ে যায়। মিনারার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ আনে। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম। ওসি (তদন্ত) নাজমুল হুদা। সেকেন্ড অফিসার এসআই লুৎফুন কবীর, এসআই পিয়ার আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরাতহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে পাঠায়। গতকাল রাত ৯টার দিকে পাঁচকমলাপুর গ্রামের পৌঁছুলে লাশ কোথায় দাফন হবে এ নিয়ে গ্রামজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের লোকজনের চাপের মুখে মিনারার বর্তমান স্বামীর জমিতে লাশের দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে গ্রামসূত্রে জানায়।

এ ব্যাপারে গ্রামবাসী জানায়, পাঁচকমলাপুর গ্রামের মৃত খোকার স্ত্রী বিধবা মিনারার স্বামী এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান প্রায় ৫ বছর আগে। দুটি সন্তান নিয়ে অতুল পাথারে পড়ে মিনার। গ্রামের বাজারের ঝাড়ু দেয়া ও গ্রামে ভিক্ষা করে দুটি সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন যাপন করছিলো। এরই মাঝে একই গ্রামের মৃত ইলাহী মণ্ডলের ছেলে মসলেম গত কয়েক মাস ধরে তাকে ফুঁসলিয়ে দেহভোগ করে। এরই মাঝে অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে মিনারা। বিষয়টা গ্রামে জানাজানি হলে। গ্রামের একটি পক্ষ মসলেমের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় টাকা। অন্তঃসত্ত্বা মিনারার সন্তান নষ্ট করতে বাধ্য করে। এ নিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মিনারার পাশে দাঁড়ায় জেলার কয়েকটি এনজিও সংস্থা। গত ১৫ দিন আগে মসলেম মিনারাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বিয়ের পর থেকে মসলেম চিল্লায় যাওয়ার নাম করে নিরুদ্দেশ হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরিষাডাঙ্গা গ্রামে বোনের বাড়িতে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই মাঝে মিনারার বাজার ঝাড়ু দেয়া কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের লোকজন তাকে ভিক্ষা দেয়া বন্ধ করে দেয়। নাবালক দুটি সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে মিনারা। দিন কাটেতে থাকে খেয়ে না খেয়ে। গতকাল মসলেমকে খুঁজতে বের হয়েছিলো বলে গ্রামসূত্র জানায়।

গ্রামবাসী আরো জানায়, আলমসাধুতে অন্য যাত্রী থাকলেও তাদের কেউ আহত না হলেও মিনারার মৃত্যু রহস্যজনক বলে জানায়।  গতকাল সন্ধ্যায় লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামে পৌঁছুলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পিতা-মাতা হারা সন্তান চাদনীঁ (১৪) ও বিপরিতের (১০) কান্নায় গ্রামের আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে ওঠে। পিতা হারা দুটি সন্তান তাদের মাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা কোনো সান্তনা খুঁজে পাচ্ছে না। কে তাদের দেখাশোনা করবে। কে তাদের খোরাক জোগাবে। কে শুনবে তাদের শত আবদার।