আপত্তিকর অবস্থায় দেখায় প্রাণ গেলো স্কুলছাত্রের

স্টাফ রিপোর্টার: সজলকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন তার পিতা-মাতা। নিজের মতো ক্ষৌরকার কাজ করবে না তার ছেলে। লেখাপড়া শিখে বড় কোনো অফিসার হবে। আর এ স্বপ্ন নিয়ে ছেলে সজলকে ভর্তি করান স্কুলে। ভালোভাবেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিলো সজল। পিতার স্বপ্ন পূরণে সে-ও প্রতিজ্ঞা করে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার। আর কদিন পরই ছিলো তার জেএসসি পরীক্ষা। এ জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলো। জিপিএ-৫ যেন পায় সেভাবে পড়ছিলো। পিতা এ জন্য গৃহশিক্ষক রেখে দেয় সবুজ নামে একজনকে। এই সবুজ উত্তর কাফরুলের ফ্যান্টাসি এডুকেশন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। শিক্ষক সবুজই বেড়ানোর নাম করে নিয়ে যায় সজলকে। তারপর জুসের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায়। সজল এ জুস খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর বস্তাবন্দি করে ফেলে দেয়। গত ২৯ আগস্ট পুলিশ অজ্ঞাত বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করে। আর গতকাল সজলের পিতা শ্যামল চন্দ্র শীল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমর্গে ছেলে সজল চন্দ্রের লাশ শনাক্ত করেন। গতকালই পুলিশ শিক্ষক সবুজকে গ্রেফতার করে। এরপরই বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। সজলদের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার লালমোহন কলেজপাড়ায়। ঢাকায় কাফরুল থানাধীন ১১৬৮ কচুক্ষেত বৌবাজারে থাকে তাদের পরিবার নিয়ে। মা-বাবার দু সন্তানের মধ্যে সজল বড়। সে উত্তর কাফরুল স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কন্যা শিমলা একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। দীর্ঘদিন ধরে সবুজ প্রাইভেট পড়াতেন সজলকে। এক পর্যায়ে এলাকার এক গৃহবধূর সাথে সবুজের যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন সজল

2nd4

তাদের দেখে ফেলে আপত্তিকর অবস্থায়। এরপর থেকে গৃহশিক্ষক সবুজের মনে ভয় ঢোকে, সজল কাউকে কিছু বলে দেয় কি-না। গত ২৮ আগস্ট ছিলো শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী। এ উপলক্ষে সজলের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো তার তিন ফুফাত বোন। বিকেলে ফুফাত বোনদের সাথে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর পরে সজল বাসায় ফিরছিলো। পথিমধ্যে দেখা হয় সবুজের সাথে। এ সময় সবুজ বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে যায়। ওদিকে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ছেলে ঘরে না ফেরায় সজলের পিতা-মাতা-বোনসহ স্বজনেরা উদ্বিঘ্ন হয়ে ওঠেন। পরিচিত সকল স্থানে তারা খোঁজ করেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান মিলেনি তার। ছেলে ঘরে না ফেরায় চরমভাবে ভেঙে পড়েন তার মা সুচিত্রা। রাত ৮টায় শ্যামল শীলের মোবাইলফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তি এক নম্বর থেকে ফোন করে বলে, ছেলেকে খোঁজার দরকার নেই। সে আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ছেলে ফেরত পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে ওই মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে শ্যামল শীল পুলিশের শরণাপন্ন হন। ছেলে নিখোঁজ হয়েছে বিস্তারিত জানিয়ে কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন সকালে দুর্বৃত্তরা আবার ফোন করে। তারা সজলকে অপহরণ করার কথা স্বীকার এবং তার মুক্তির দাবিতে এক লাখ টাকা দাবি করে। কাফরুল থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে গৃহশিক্ষক সবুজকে গ্রেফতার করেছে। সে এলাকায় কোচিং শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পুলিশের কাছে আছে। অপহরণ ও হত্যার নেপথ্যে তার সঙ্গে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।